মো. মামুনুর রশিদ আবির, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় এক সময়ের জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ঐতিহ্যবাহী ফসল কাউন (ফক্সটেল মিলেট) আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারে চাহিদার অভাবে দিন দিন কমে আসছে কাউন চাষের পরিমাণ।
বৈজ্ঞানিক নাম Setaria italica—এই ফসল দিয়ে এক সময় তৈরি হতো পায়েস, খিচুড়ি, খীরসহ নানা মুখরোচক খাদ্য। এটি ছিল গরিব মানুষের খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অথচ আজকের প্রজন্মের কাছে এই নামটাই অচেনা।
উন্নত প্রযুক্তি ও অধিক ফলনের আশায় কৃষকেরা এখন উচ্চফলনশীল ধান, ভুট্টা কিংবা অন্যান্য বাণিজ্যিক ফসলে ঝুঁকে পড়ায় কাউনের মতো প্রাচীন ও পুষ্টিকর শস্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম Said,
“কাউন শুধু ফসল না, এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এখন কিছু এলাকায় নিজেদের খাওয়ার জন্য সামান্য চাষ হয়, কিন্তু সরকারি উদ্যোগ না থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কাউনের নামও জানবে না।”
পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি শস্য
৩নং সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন Said,
“কাউন শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, কোলেস্টেরল কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ভিটামিন-মিনারেলের চাহিদা পূরণে কার্যকর। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও খুবই কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।”
বর্তমানে কী অবস্থা?
ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের খরিপ মৌসুমে উপজেলার প্রায় ০.২ হেক্টর জমিতে কাউনের আংশিক চাষ হয়েছে, যার অনেকটিতে সাথি ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলও রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুজ্জামান Said,
“এক সময় বন্যা ও দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল কাউন। এখন কিছু মানুষ এটি পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন। আমরা চেষ্টা করছি কাউন চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে, যাতে এটি আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।”
Conclusion
এক সময়ের নিত্যপ্রয়োজনীয় ও সহজলভ্য ফসল আজ যেন হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে। অথচ স্বল্প খরচে চাষযোগ্য এই শস্য শুধু স্বাস্থ্যসম্মত নয়, বরং খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।