লন্ডনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করে আসন্ন এক বিক্ষোভ ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার স্যার মার্ক রাওলি। তিনি বলেন, “প্রতিবাদের অধিকার থাকলেও, এই গোষ্ঠীর পক্ষে এমন কর্মসূচি বেশিরভাগ মানুষের দৃষ্টিতে বৈধ প্রতিবাদের সীমা ছাড়িয়ে যায়।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সরকার সোমবার পার্লামেন্টে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থাপন করতে যাচ্ছে, যেখানে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। এতে সংগঠনটির সদস্য হওয়াও অবৈধ হয়ে যাবে।
শুক্রবার, সংগঠনটির কর্মীরা অক্সফোর্ডশায়ারে অবস্থিত RAF ব্রাইজ নর্টনে ঢুকে দুটি সামরিক বিমানে লাল রঙ স্প্রে করে। গাজার যুদ্ধ ও ইসরায়েলকে যুক্তরাজ্যের সমর্থনের প্রতিবাদেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
৩৫টি সংগঠন এই বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশন, কেজ এবং মুসলিম এনগেজমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (MEND)। মেট পুলিশ জানিয়েছে, যতক্ষণ না এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা বিক্ষোভ ঠেকাতে আইনগতভাবে সক্ষম নয়। তবে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা হবে।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশন জানিয়েছে, সরকার ও রাজনৈতিক মহল দ্রুততর ভাবে তাদের “সন্ত্রাসী” বলছে, অথচ তারাই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। সংগঠনের সদস্য সাঈদ তাজি ফারুকি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মৌলিক ভিত্তিকে নষ্ট করছে।”
গাজায় চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বেশ কয়েকটি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে হামলার দায় স্বীকার করেছে। মে মাসে আয়ারল্যান্ডে একটি মার্কিন সামরিক বিমানে রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও তারা স্বীকার করে।
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার RAF ঘাঁটিতে হামলাকে “লজ্জাজনক” বলে মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি বর্তমানে কনট্রা-টেররিজম পুলিশের তদন্তাধীন।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ ওয়েস্টমিনস্টারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান এই সিদ্ধান্তকে “সঠিক পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছেন। অপরদিকে, লেবার এমপি জারা সুলতানা বলেন, “২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে এক মিলিয়ন মানুষ মিছিল করেছিল, এখন সেই একই চিত্র আবার ফিরে এসেছে।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, প্রতিবাদ দমন করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ “অতিশয় উদ্বেগজনক”।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই থেকে লন্ডনে নিয়মিত যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গাজায় এ পর্যন্ত ৫৫,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৫,০০০ এরও বেশি শিশু, এমন তথ্য দিয়েছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।