আগামী এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এই আইনের আওতায় গঠন করা হবে একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী গুমবিষয়ক কমিশন, যা গুম সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত, বিচার ও প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সোমবার সচিবালয়ে জাতিসংঘের গুম সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই উদ্যোগ শুধু বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি নয়, বরং একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক ও মানবাধিকারে সম্মানিত রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ। গুম প্রতিরোধ আইন ভবিষ্যৎ কোনো সরকারই বাতিল করবে না বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার মতে, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি—সব রাজনৈতিক দলই কোনো না কোনো সময়ে গুমের শিকার হয়েছে এবং এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার হওয়ায় তারাও এ ধরনের আইনের পক্ষে থাকবে।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘের গুম সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি, এমনকি তাদের চিঠিরও জবাব দেয়নি। অথচ বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল—গুমের বিষয়ে তদন্ত ও বিচার করা হবে। জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা এই অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছেন এবং গঠিত গুম কমিশনের কাজেরও প্রশংসা করেছেন। তারা কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন এবং নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন।
এসময় ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন নিয়েও বিস্তারিত কথা বলেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই কমিশন অত্যন্ত সফল ছিল, যদিও শ্রীলঙ্কা ও নেপালে ততটা সফলতা পায়নি। বাংলাদেশের ট্রুথ কমিশন চারটি ধাপে কাজ করবে—ট্রুথ সিকিং, মেমোরিয়ালাইজেশন, অ্যামনেস্টি এবং রিকনসিলিয়েশন। ‘ট্রুথ সিকিং’-এর অংশ হিসেবে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট, চলমান ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত এবং মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর নেতৃত্বে গণভবনে স্থাপিত ‘জুলাই জাদুঘর’ ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। মেমোরিয়ালাইজেশন ধাপে স্মৃতি সংরক্ষণ, অ্যামনেস্টি ধাপে নির্দোষ বা ছোট অপরাধে জড়িতদের জন্য শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা এবং রিকনসিলিয়েশন ধাপে চরম অপরাধীদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ শুধু আর্থিক নয়, বরং চাকরি বা পুনর্বাসনের মতো বাস্তব সহায়তাও থাকবে। আইন উপদেষ্টা জানান, তিনি ও প্রধান বিচারপতি দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে এই বিষয়ে গবেষণা ও মতবিনিময় করেছেন এবং দ্বিতীয় ধাপে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিশেষজ্ঞসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন ও ছাত্র প্রতিনিধিদের যুক্ত করে মতামত নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া গুমবিরোধী ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের পথে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।