অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠকটি শেষ হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের অভিজাত ডরচেস্টার হোটেলে শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক শেষ হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। এটি ছিল তাদের প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই বৈঠক দুই শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
তারেক রহমান নির্ধারিত সময়ের আগেই হোটেলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকটি সম্পূর্ণ একান্তে অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব। বৈঠক শেষে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে লন্ডনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবাদ ব্রিফিং করতে পারেন বলেও জানা গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে নির্বাচনকালীন সময় নির্ধারণ। প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব রেখেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এই সময়সীমা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হতে পারে। তারা মনে করে, এপ্রিল মাস প্রচণ্ড গরম ও ঝড়বৃষ্টির সময় হওয়ায় ভোটের জন্য অনুপযুক্ত। তার আগেই রমজান ও ঈদুল ফিতর থাকায় প্রচারণা চালানোও কঠিন হবে। এ প্রেক্ষিতে বিএনপি ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের দাবি থেকে কিছুটা পিছিয়ে এপ্রিলে ভোটের প্রস্তাবে কিছুটা নমনীয়তা দেখাতে পারে, তবে সরকারের অবস্থান অনড় থাকলে আপস কঠিন হবে।
এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার প্রস্তাবও বৈঠকে উত্থাপিত হতে পারে। অতীতে বিএনপি যাদের নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে, এবারও তাদের নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী ও দলীয় দোসরদের সরিয়ে দেওয়ার দাবিও আলোচনায় থাকতে পারে।
সংস্কার ইস্যু নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও তারেক রহমান নিজ থেকে ‘সংস্কার’ আলোচনায় তোলেননি, তবে প্রধান উপদেষ্টা আলোচনায় আনলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাকে আগেই দিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠকে কী বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ও এতে নিহতদের বিচার, মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কারসহ আরও কিছু বিষয় বৈঠকের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে। এসব ইস্যুতে তরুণদের দল এনসিপি বেশ সরব ভূমিকা রাখছে, যা এই আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বৈঠক শুধু দুই শীর্ষ নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।