ঢাকা প্রতিনিধি:
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আবারও অনড় অবস্থান জানাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরপরই দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক বসে, যেখানে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে জোরালো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে দলটি।
বুধবার রাতে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা এতে অংশ নেন। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অহেতুক বিলম্ব না করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা এবং তা রক্ষায় বিএনপি আপসহীন থাকবে।”
বিএনপি বলছে, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকৌশল ব্যাখ্যা করলেও, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে না করে আরও পেছানোর সুনির্দিষ্ট কোনো যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারেননি। বরং ‘আবহাওয়া সংকট’, ‘রমজানের সময়সীমা’ ও কিছু লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জকে সামনে টেনে এনে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছে দলটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবার সম্মতির ভিত্তিতে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজন। অথচ বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক কাঠামোটি একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত। এটি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে।”
বিএনপির অভিযোগ, সরকারঘনিষ্ঠ একটি রাজনৈতিক শক্তিকে সুবিধা দিতে নির্বাচন পেছানোর কৌশল নেওয়া হচ্ছে, যাতে নির্বাচন পূর্ব নির্ধারিত স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী সম্পন্ন করা যায়। তারা দাবি করছে, এর ফলে দেশের জনগণের ভোটাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা হুমকির মুখে পড়ছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এই অনড় অবস্থান আগামী দিনের রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। বিশেষ করে যদি ডিসেম্বরের সময়সীমা উপেক্ষা করে নির্বাচন পেছানো হয়, তাহলে তা বৃহৎ রাজনৈতিক সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।
নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য:
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। “সুষ্ঠু প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন,”—এমনটাই বলা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও।
জনগণের প্রতিক্রিয়া:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক সাধারণ নাগরিক লিখেছেন, “সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচন সময়মতো হওয়া উচিত। দলীয় স্বার্থে জনগণের অধিকার যেন গলা টিপে হত্যা না হয়।”
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির দৃঢ় অবস্থান এবং সরকারের সম্ভাব্য সময়ক্ষেপণের কৌশল আগামী দিনে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন সংলাপ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতি—যার মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনের পথে নিশ্চিত করা যাবে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ।