Sunamganj Correspondent:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী জাদুকাটায় ইজারা শেষ হওয়া খনিজ বালি মহাল থেকে বিপুল পরিমাণ বালি ও পাথর অবৈধভাবে উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের উপস্থিতিতে জিম্মায় নেওয়া অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের বাল্কহেড (স্টিল বডি) হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়ায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
গত ২৫ মে জাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালি লোড করার সময় স্থানীয় জনতা উপজেলা প্রশাসন ও থানায় খবর দেয়। বিকেল সাড়ে চারটায় প্রশাসনের অভিযানের সংবাদ পেয়ে বালির মালিকপক্ষ, শ্রমিক, মাঝি-সুকানীরা বাল্কহেড ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম, থানা পুলিশ, আনসার বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাল্কহেডটিকে জিম্মায় নেন তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদার) জহুর আহমেদ ও ইউপি সদস্য ফয়েজ আহমেদ ফজু। জিম্মাকৃত বাল্কহেডে প্রায় ৩ হাজার ঘনফুট খনিজ বালি ছিল, যার মূল্য আনুমানিক ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা। বাল্কহেডটির বাজারমূল্য ৪৫ লাখ টাকা।
বাল্কহেড গায়েব, প্রশাসনের দায় এড়ানোর চেষ্টা?
বুধবার (৪ জুন) স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক দিন আগেই জিম্মায় থাকা বাল্কহেডটি চুরি হয়ে গেছে। ইউপি সদস্য ফয়েজ আহমেদ ফজু বলেন,
“বালির মালিক ও বাল্কহেডের শ্রমিকরা নিজেরাই রাতের আঁধারে এটি সরিয়ে নিয়েছে। আমি বিষয়টি তহশীলদারকে জানিয়েছি।”
অন্যদিকে তহশীলদার জহুর আহমেদ জানান,
“বাল্কহেডটি ইউপি সদস্যের জিম্মায় ছিল। এখন কোথায় আছে সেটা জানি না। শুনেছি কয়েকদিন আগে সেটি চুরি হয়ে গেছে।”
বালি-পাথর পাচারে ‘আইনি ফাঁক’ ও উচ্চ আদালতের অপব্যবহার
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী এলাকা এবং খাস খতিয়ানের ভুমি থেকে ইজারা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও এক কোটি ঘনফুটের বেশি খনিজ বালি ও লাখ লাখ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে ডাম্পিং করা হয়েছে।
বালি-পাথর ব্যবসায়ী চক্র সরকারি রাজস্ব, ভ্যাট, কর পরিশোধ না করে একাধিক রিট ও আইনি কৌশলের আশ্রয়ে মালিকানা দাবি করে চোরাইপথে এসব খনিজ সম্পদ পাচার করছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে তারা এই চক্রের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সুবিধা নিচ্ছেন।
জনমনে উদ্বেগ ও প্রশ্ন
বাল্কহেডটি কোথায় গেল? প্রশাসনের উপস্থিতিতে জিম্মায় নেওয়া একটি এত বড় সম্পদ কীভাবে গায়েব হয়ে যায়— তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“সরকারের সম্পদ দিনের আলোয় চুরি হয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসনের জবাব— ‘জিম্মায় ছিল, চুরি হয়ে গেছে!’ এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
Conclusion
প্রশাসনের সামনে থেকে সরকারি সম্পদ গায়েব হওয়া শুধু দুর্নীতির নয়, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনারও চরম নিদর্শন। জাদুকাটায় হাজার কোটি টাকার খনিজ সম্পদ পাচার ও চুরি রোধে অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে।