মনির হোসেন, বেনাপোল (যশোর):
চারদিকে টুংটাং শব্দে মুখর বেনাপোল—শোনা যাচ্ছে যেন এক মহাযুদ্ধের প্রস্তুতির দামামা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভা ও আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে কামারদের যেন দম ফেলারও সময় নেই। ছুরি, চাপাতি, দা, নারিকেল কোরানি, চামড়া ছাড়ানোর চাকু—এসব দেশীয় লোহার হাতিয়ার তৈরিতে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাতদিন চলছে প্রস্তুতি
স্থানীয় কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ছুরি ও চাপাতির চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেই চাহিদা পূরণ করতে তারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সময়মতো হাতিয়ার সরবরাহ করতে গিয়ে অনেকেই খাওয়া-দাওয়ার ঠিকও রাখতে পারছেন না।
কামার দিলীপ কুমার সাহা বলেন, “বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ঈদে আয় অনেক বেশি হয়। উন্নত মানের ধারালো দা ২৫০-৪০০ টাকা, ছুরি ৪৫০-৭০০ টাকা, চাপাতি ২৫০-৫৫০ টাকা, চাকু ১৫০-২৫০ টাকা, নারিকেল কোরানি ১০০-২০০ টাকা এবং মাংস কাটার বটি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
হাটবাজারে প্রস্তুতি পুরোদমে
সরেজমিনে দেখা গেছে, শার্শা উপজেলার নাভারন নতুন ও পুরাতন বাজার, বাগআচড়া, ডিহি, লক্ষণপুরসহ বিভিন্ন স্থানে কামাররা পুরোদমে কাজ করছেন। শুধু স্থানীয় নয়, আশপাশের গ্রাম থেকেও ক্রেতারা আসছেন বেনাপোলের কামারদের তৈরি হাতিয়ার কিনতে। তাদের নিখুঁত কারুশিল্প ও আন্তরিক ব্যবহার ক্রেতাদের মুগ্ধ করছে।
হাতিয়ার বিক্রি ভালো, তবু সংকট আছে
উপজেলার একাধিক ইউনিয়নের কামাররা জানান, সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও ঈদের সময় আয় ভালো হয়। তবে লোহার দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেলে লাভ কমে যায়। যদি আগেই কাঁচামাল সংগ্রহ করে রাখা যেত, তাহলে লাভ আরও বেশি হতো।
শার্শার কামারবাড়ি মোড়ের প্রদীপ চন্দ্র, নাভারনের বরুণ, লক্ষণপুর বাজারের দিলীপ ও মানিকসহ অনেকে জানান, “বাজারে চীনা ও আমদানিকৃত ছুরি-চাপাতির কারণে আমাদের তৈরি হাতিয়ারের চাহিদা আগের মতো নেই। ফলে পূর্বপুরুষের এই পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
চাহিদা আছে, টিকে থাকতে চাই আধুনিকতায়
তবে ঈদের সময় পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য এসব দেশীয় হাতিয়ারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। তাই কামাররা চান—এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হোক।