Staff Correspondent :
নাটোর-সদরের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের গানম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কনস্টেবল মো. মোশাররফ হোসেনের (বিপি নং ৮১০১০২১২৭৪) বিরুদ্ধে স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী স্ত্রী ফরিদা পারভীন তার দুই সন্তানসহ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত তিনদিন ধরে অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
সেখানে উপস্থিত থেকে ফরিদা পারভীন বলেন, “আমার স্বামী আমাকে বারবার মারধর করেছে। দাঁত ভেঙে দিয়েছে, হাত ভেঙেছে, আমার সন্তানদেরও রেহাই দেয়নি। আমি বিভিন্ন সময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জেলা প্রশাসন ও সাংসদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। বরং উল্টো নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।”
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক অভিযোগটি এসেছে তাদের কন্যা, এইচএসসি পরীক্ষার্থী মালিহার মুখে। মালিহা অভিযোগ করে বলেন, “আমার বাবা আমাকে বলে, তাকে বাবা না বলে আংকেল ডাকতে।” কারণ, মোশাররফ হোসেন তার প্রথম স্ত্রী ফরিদাকে নির্যাতনের মাধ্যমে ঘর থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে এক ব্যক্তিকে পায়ে গুলি করে তার স্ত্রী তাসলিমাকে জোর করে বিয়ে করেন।
যৌতুক, সম্পত্তি আত্মসাৎ ও পৈশাচিক নির্যাতন
ফরিদা পারভীন আরও জানান, বিয়ের পর সংসার চালাতে তিনি আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে মোশাররফকে যৌতুক দেন। নিজের গহনা বিক্রি করে নাটোরে তিন শতাংশ জমি কিনলেও, কনস্টেবল মোশাররফ তা নিজের নামে লিখিয়ে নেন।
বর্তমানে মোশাররফ হোসেন নওগাঁ জেলার নওহাটা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। ফরিদা পারভীন এবং মোশাররফের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাবেক স্বামী মাহমুদ হাসান দীপু — উভয়েই লিখিত ও মৌখিকভাবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।
মানবাধিকার সংগঠনের সংহতি ও হুঁশিয়ারি
বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসক্লাবে অবস্থানরত পরিবারটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, “একটি মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, একটি শিশু বাবার পরিচয় দিতে পারছে না। আমরা যদি এখনও চুপ থাকি, তাহলে আর মানবাধিকারের কথা বলার অধিকার আমাদের থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত মোশাররফকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা না হলে, প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।”
প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন— এত অভিযোগ, অনশন, সন্তানদের মানবিক বিপর্যয় — এরপরও কেন প্রশাসন নীরব? কীভাবে একজন পুলিশ সদস্য বিচার বহির্ভূতভাবে গুলি চালিয়ে বিয়ে করতে পারেন এবং এত বছর ধরে কোনো তদন্ত বা শাস্তির মুখোমুখি না হয়ে সরকারি চাকরিতে বহাল থাকতে পারেন?