ভারতের ওডিশা রাজ্যের গজপতি জেলায় ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া এবং দত্তক নেওয়া এক কিশোরীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন তার পালক মা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত রয়েছে ওই কিশোরীর দুই প্রেমিকও।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৯ এপ্রিল, গজপতি জেলার পারালাখেমুন্ডি শহরের এক ভাড়া বাসায়। পুলিশ জানায়, নিহত রাজলক্ষ্মী কর (৫৪) দীর্ঘদিন ধরে নিঃসন্তান ছিলেন। প্রায় ১৪ বছর আগে তিনি এবং তাঁর স্বামী ভুবনেশ্বর শহরে রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় এক সদ্যোজাত কন্যাশিশুকে উদ্ধার করে দত্তক নেন। কিছুদিন পর স্বামীর মৃত্যু হলে রাজলক্ষ্মী একাই মেয়েটিকে লালন-পালন করে আসছিলেন।
তবে পালিত মেয়ের বয়স যখন ১৩, তখন থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুই তরুণ—২১ বছর বয়সী মন্দির পুরোহিত গণেশ রাঠ ও ২০ বছর বয়সী দীনেশ সাহুর সঙ্গে। রাজলক্ষ্মী এই সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। মায়ের বাধা, সম্পত্তির লোভ এবং প্রেমিকদের প্ররোচনায় শেষ পর্যন্ত ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেয় কিশোরী।
পুলিশ জানিয়েছে, ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় কিশোরী রাজলক্ষ্মীর খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে অচেতন করে। এরপর প্রেমিক গণেশ ও দীনেশকে বাড়িতে ডেকে আনে। তারা তিনজন মিলে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রাজলক্ষ্মীকে।
পরবর্তীতে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। প্রথমদিকে বলা হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজলক্ষ্মী মারা গেছেন। কারণ, তার আগে থেকেই হৃদরোগ ছিল। তাই কেউ সন্দেহ করেননি।
তবে পরে রাজলক্ষ্মীর ভাই শিবা প্রসাদ মিশ্র বিষয়টি ঘুণাক্ষরেও টের পান। তিনি ভুবনেশ্বরে কিশোরীর ফেলে যাওয়া একটি মোবাইল ফোন খুঁজে পান। ফোনে থাকা ইনস্টাগ্রাম চ্যাট ঘেঁটে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর সত্য—সেখানে খুনের পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ, সম্পত্তি দখলের আলোচনা এবং সোনা-টাকা নেওয়ার ছক লেখা ছিল।
১৪ মে শিবা প্রসাদ পারালাখেমুন্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ পুনরায় তদন্ত শুরু করে এবং কিশোরীসহ তিনজনকেই গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার আগে কিশোরী তার মায়ের কিছু সোনার গয়না গণেশ রাঠকে দিয়েছিল, যা সে ২ লাখ ৪০ হাজার রুপিতে বন্ধক রাখে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ গ্রাম সোনা, তিনটি মোবাইল ফোন এবং হত্যায় ব্যবহৃত দুটি বালিশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বর্তমানে তিনজনই পুলিশি হেফাজতে রয়েছে এবং তদন্ত চলছে। পুরো রাজ্যজুড়ে এ ঘটনায় চরম চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।