বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা একাধিকবার ঘোষণা দিলেও—“আর মব চলবে না”—তার বাস্তব প্রতিফলন এখনও দেখা যাচ্ছে না। বরং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
সর্বশেষ ১৩ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার আলম সাম্য ছুরিকাঘাতে নিহত হন। সাম্য ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঘটনায় তিনজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ। তাদের একজন তামিম হাওলাদার—যার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে একদল লোক আগুন ধরিয়ে দেয়। অথচ পুলিশ এখনও তাকে সন্দেহভাজন হিসেবেই উল্লেখ করছে।
এ ঘটনা ছাড়াও রাজধানীর বসুন্ধরা, বগুড়া ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনি, মারধর ও ‘মব জাস্টিসের’ নজির বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি ইরানের দুই নাগরিককে ‘ছিনতাইকারী’ অপবাদে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানো হয়—যদিও পুলিশ পরে জানায় তারা নিরপরাধ।
মবের ভয়াল পরিসংখ্যান
Human rights organizations হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (HRSS) হিসেব অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১৯ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনিতে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৪ জন।
গত ১০ বছরে এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭৯২ জনে, যার মধ্যে ২০২৪ সালেই নিহত হয়েছেন সর্বোচ্চ ১৭৯ জন.
পুলিশও রেহাই পাচ্ছে না
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ মাসে পুলিশের উপর মোট ২২৫টি হামলা হয়েছে, যার মধ্যে ৭০টি ছিল বড় ধরনের। শুধু এপ্রিল মাসেই পুলিশের বিরুদ্ধে ৩৭টি মব হামলার Things happen.
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “পুলিশ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন মবের হামলা তাদের নতুন সংকটে ফেলছে। অনেক ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক আশীর্বাদও রয়েছে।”
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক মন্তব্য করেন, “মনে হচ্ছে সরকারের উপরও সরকার আছে। এমন অবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।”
গণমাধ্যমের আত্মনিয়ন্ত্রণ
মবের হুমকির ফলে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ বা আত্মনিয়ন্ত্রণ ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
সরকার কী বলছে?
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সহকারি সচিব ফয়েজ আহমেদ বলেন, “সবকিছুর পেছনের প্রেক্ষাপট বোঝা জরুরি। সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না—তা বলা ঠিক নয়। আমরা স্বীকার করি, পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তবে চেষ্টা চলছ
অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর বার্তার পরও দেশে ‘মব জাস্টিস’-এর যে লাগামছাড়া বিস্তার, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও সরকারের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। এখন দেখার বিষয়—সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।