যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য এখন থেকে ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়েছে। নতুন এ নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারীদের তাদের ব্যবহৃত ফেসবুক, টুইটার (এক্স), ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত নাম বা আইডি আবেদনপত্রে উল্লেখ করতে হবে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, এই উদ্যোগ জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য নেওয়া হয়েছে। তাদের ভাষ্য, সামাজিক মাধ্যমে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সহজ হবে।
তবে এই নিয়ম নিয়ে উদ্বেগ ও সমালোচনার শেষ নেই। গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে অনেকেই এটিকে ‘ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে দেখছেন। বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন মানুষের রাজনৈতিক মতামত, ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক সম্পর্কসহ নানা ব্যক্তিগত তথ্য থাকে। এসব তথ্য সরকারের হাতে গেলে তা অপব্যবহারের ঝুঁকি থেকেই যায়।
বিশেষ করে, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বেশি শঙ্কিত। তাদের আশঙ্কা, সামাজিক মাধ্যমের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সরকারের নজরদারির শিকার হতে পারেন তারা। এতে যেমন তাদের কাজের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হবে, তেমনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।
মার্কিন সরকার অবশ্য আশ্বস্ত করেছে যে, এসব তথ্য শুধুমাত্র নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্যবহৃত হবে এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু সমালোচকদের একাংশ বলছেন, সরকারের এমন আশ্বাসের বাস্তব ভিত্তি দুর্বল এবং এটি নজরদারি বাড়ানোরই আরেকটি কৌশল মাত্র।
ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশ এ নিয়মের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, এটি শুধু আবেদনকারীদের নয়, পুরো বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অনেকেই মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশগুলোকেও একই পথে হাঁটতে উৎসাহিত করবে, যা বৈশ্বিকভাবে মানুষের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
সবশেষে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ভিসানীতি বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। এটি যেমন নিরাপত্তার দিক থেকে একটি পদক্ষেপ, তেমনি মানবাধিকার ও গোপনীয়তার প্রশ্নেও বড় একটি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।