ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তিন বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো ইউরোপের চার প্রধান দেশের নেতা একসঙ্গে কিয়েভে উপস্থিত হয়ে রাশিয়ার ওপর যুদ্ধবিরতির জন্য একযোগে চাপ সৃষ্টি করেছেন। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধানেরা শনিবার (১০ মে) কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তাদের এই সফর শুধু কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং প্রতীকী দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন মস্কো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর উদযাপন করছে।
নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়াকে ৩০ দিনের জন্য একটি পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানান। তাদের বক্তব্যে বলা হয়, রক্তপাত বন্ধ করতে হবে, আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, এবং শান্তি আলোচনার পথ খুলে দিতে হবে। ইউরোপীয় নেতারা আরও বলেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে স্বাধীন অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা জানান, ইউক্রেন ও তার মিত্ররা সোমবার থেকে শুরু করে অন্তত ৩০ দিনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, যদি রাশিয়া সম্মত হয় এবং যথাযথ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তবে এই যুদ্ধবিরতি ভবিষ্যতের শান্তি আলোচনার ভিত্তি হতে পারে।
তবে মস্কো থেকে এখনো অনমনীয় সাড়া এসেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া তখনই যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভাববে, যদি ইউক্রেনের মিত্ররা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে। তার ভাষায়, “বর্তমানে রুশ বাহিনী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে, এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনেরই বেশি উপকারে আসবে।”
উল্লেখ্য, রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে এবং এখনো পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এই নতুন কূটনৈতিক উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে মস্কোর পরবর্তী অবস্থানের ওপর। তবে এই সফর যে যুদ্ধ ক্লান্ত ইউরোপের পক্ষ থেকে শান্তির পথে একটি শক্ত বার্তা, তা স্পষ্ট।