আজ ৮ মে, বিশ্ব গাধা দিবস। সহনশীল, নিরীহ ও পরিশ্রমী একটি প্রাণীর প্রতি সচেতনতা ও সম্মান জানাতেই প্রতিবছর এই দিনটি পালন করা হয় বিশ্বজুড়ে। অনেকেই হয়তো অবাক হবেন, গাধার জন্যও একটি আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে! কিন্তু একটু ভেবে দেখলে বোঝা যায়—এই প্রাণীটি আমাদের সভ্যতায় যে পরিমাণ অবদান রেখেছে, তার তুলনায় সে পেয়েছে কেবল উপহাস, অবহেলা আর অপমান।
প্রাচীনকাল থেকেই গাধা ছিল মানুষের বিশ্বস্ত বাহক। গ্রামবাংলার খাল-বিল পেরিয়ে, পাহাড়ি অঞ্চলের দুর্গম পথ ধরে সে বহন করেছে খাবার, জিনিসপত্র, কখনও কৃষিজ সরঞ্জাম। অল্প খেয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করার সক্ষমতা, অসাধারণ ভারবহন ক্ষমতা এবং শত্রু চিনে সাবধান হওয়ার প্রবৃত্তি গাধাকে করেছে একটি কার্যকর, অথচ প্রায় ভুলে যাওয়া শ্রমিক।
তবে জনমানসে গাধার অবস্থান বড়ই করুণ। তাকে বোকা, অলস, নির্বোধ বলেই চিত্রিত করা হয়। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, গাধা একান্তভাবে চিন্তাশীল প্রাণী। বিপদের সময় না পালিয়ে স্থির থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা তার “ধীরবুদ্ধির” নয়, বরং নিরাপত্তার জন্য গভীর পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অংশ।
বিশ্ব প্রাণী সংস্থাগুলোর মতে, গাধা এখন চরম অবহেলার শিকার। বহু দেশে গাধাকে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে কাজ করানো হয়, স্বাস্থ্যসেবা নেই, পেট ভরার খাবারও জোটে না। এমনকি চামড়ার জন্য অমানবিকভাবে হত্যা করা হয় বহু প্রাণীকে। এসবই দৃষ্টি আনার লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হয় World Donkey Day.
বাংলাদেশেও গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও কিছু এলাকায় গাধার ব্যবহার দেখা যায়। তবে শহুরে সভ্যতায় তাদের স্থান নেই বললেই চলে। ফলে গাধার শ্রমের মূল্য যেমন কেউ দেয় না, তেমনি সম্মানটুকুও জোটে না।
বিশ্ব গাধা দিবস তাই শুধু প্রাণীটির জন্য সহানুভূতির দিন নয়, এটি আমাদের আত্মসমালোচনারও দিন। একটি প্রাণীর মূল্যায়ন কীভাবে কেবল কুসংস্কার, বিদ্রূপ আর অজ্ঞতায় ডুবে যেতে পারে—সেটার প্রতীক হয়ে উঠেছে গাধা।
এবার সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের। বোকার প্রতীক নয়, গাধা হতে পারে স্থিরতা, পরিশ্রম ও সহনশীলতার প্রতিচ্ছবি। আর সেটাই হোক আজকের দিনের শিক্ষা।