ঢাকা, ৭ মে ২০২৫ — উপমহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে আবারও চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারত আজ মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ভারত দাবি করছে, এই হামলা ছিল ‘প্রতিরক্ষামূলক’ এবং সন্ত্রাসবিরোধী উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের লাইভ আপডেট অনুযায়ী, হামলার পরপরই এই মুহূর্তে প্রায় ৩৯,৪০০ জন মানুষ অনলাইনে সরাসরি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
ভারতের অবস্থান: সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে আধাসামরিক বাহিনীর একটি কনভয়ে প্রাণঘাতী হামলার জবাব হিসেবে এই বিমান অভিযান চালানো হয়। দিল্লির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি ধ্বংস করাই ছিল অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা কোনোভাবেই সন্ত্রাসকে বরদাশত করব না। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ভারতীয় ভূখণ্ড এবং নাগরিকদের রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: “উপযুক্ত জবাব আসবে”
অন্যদিকে, পাকিস্তান এই বিমান হামলাকে ‘উসকানিমূলক এবং আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী’ আখ্যা দিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, “ভারত যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে—এমন তথ্য আমাদের হাতে ছিল। আমরা প্রস্তুত ছিলাম এবং প্রতিঘাত হবেই।”
তিনি আরও বলেন, “মোদি সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এই অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এটা খুবই বিপজ্জনক খেলা।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: সংযমের আহ্বান
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া উভয় দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, “উভয় পক্ষকে সংযত থাকা এবং আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমাতে হবে। এই অঞ্চল বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল।”
পেহেলগাম হামলা: উত্তেজনার সূত্রপাত
গত সপ্তাহে জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভারতীয় সিআরপিএফ বাহিনীর একটি কনভয়ে হামলায় অন্তত ১৭ জন জওয়ান নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়ে বলেন, “এটি নিশ্চিত করতে হবে এই হামলার পেছনে প্রকৃত কারা ছিল। ভারত যদি এতে নির্দোষ হয়, তাহলে তারও প্রমাণ হওয়া উচিত।”
সীমান্তে সেনা মোতায়েন
উভয় দেশই সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তের কয়েকটি এলাকায় চূড়ান্ত সতর্কাবস্থা জারি করেছে। পাকিস্তানও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে বলে জানা গেছে।
যুদ্ধের আশঙ্কা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে এটি বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষক অমরনাথ সিংহ বলেন, “দুই দেশের মধ্যে এমন সংঘর্ষ আগেও ঘটেছে, তবে এবারের রাজনৈতিক পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে জটিল।”
জনগণের উদ্বেগ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ প্রকট। কাশ্মীরের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটিয়েছেন। ইসলামাবাদ এবং দিল্লিতে আতঙ্কের বাতাস বইছে। উভয় দেশের নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও যুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক আবারও এক বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। সামান্য উত্তেজনা থেকে যে বিস্ফোরক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তার জন্য দু’দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক মহলকে এখনই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।