জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষণা দিয়েছে, আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত এক সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, জনগণ ২০২৩ সালের ৫ আগস্টেই আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সুতরাং এখন দলটিকে নিষিদ্ধ করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
সমাবেশে এনসিপির নেতারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ‘টালবাহানা’ চলছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যদি দলটিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে, তাহলে ‘জুলাই যোদ্ধারা’ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
দলটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য হাইকোর্টের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।” তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়।”
এনসিপির নেত্রী তাজনূভা জাবীন বলেন, “খুনি হাসিনাকে বিদায় দেওয়া হয়েছে, এখন লক্ষ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগকে চিরতরে রাজনীতি থেকে সরানো।” এ বক্তব্যে একাত্মতা প্রকাশ করে দলের আরও কয়েকজন নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ আর কখনো বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে পারবে না।”
নেতারা আরও বলেন, শুধু রাজনীতি নয়, বরং বিচার না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। তাঁরা ভারতের ‘প্রেসক্রিপশন’-এ বাংলাদেশ চলবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এনসিপির বক্তব্যে উঠে আসে, আগামীর রাজনীতি হবে ‘আওয়ামী লীগমুক্ত বাংলাদেশ’ গঠনের রাজনীতি। এমনকি তারা সাংবাদিকদেরও সতর্ক করে বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন। শহীদ খালেদ সাইফুল্লাহর বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে ৭০টি গুলি করা হয়েছিল। এমন বর্বর হত্যার বিচার না হলে এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা—“এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার”, “চব্বিশের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই”, “ব্যান করো, ব্যান করো—আওয়ামী লীগ ব্যান করো!”
এই সমাবেশ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল, এনসিপি এবং তাদের সমর্থকদের চোখে আওয়ামী লীগ এখন শুধুই ইতিহাসের অংশ—বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের আর কোনো স্থান নেই।