Nazmul Hossain, Thakurgaon Correspondent:
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের ৩ নং হোসেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বুধবার ভোরে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে আগুন লেগে এ ঘটনা ঘটে। আর এ আগুনে পরিষদের আয় ব্যয়, ভিজিটি কার্ডের জমানো টাকার হিসাবসহ ইউপি সদস্যদের বকেয়া সম্মানির হিসেবের বিভিন্ন ফাইল ও কম্পিউটার পুড়ে যায়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আজ (বুধবার) ইউপি সদস্যদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্যদের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দল আসার কথা ছিলো ইউএনও অফিস থেকে। আর সেই তদন্ত কমিটি আসার আগেই পুড়ে গেল পরিষদের বিভিন্ন ফাইল।
কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, ইউপি সদস্যদের সম্মানীভাতা না দেওয়া, সভার রেজুলেশন জালিয়াতি ও বিভিন্ন আর্থিক খাতে দুর্নীতির বিষয়ে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত টিম আসার কথা ছিলো।
পরিষদের নৈশ্যপ্রহরী মহল্লাদার ফজলুল হক জানান, মঙ্গলবার রাত ১০ টার পর ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিষদের তার কক্ষে প্রবেশ করেন। এর পরে আমি ঘুমিয়ে যায় এবং ভোর রাতে আমি মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাছে খবর পাই এবং দেখি যে কক্ষ থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। পরে কক্ষের থাই জানালা খুলে বাইর থেকে পানি ঢেলে আগুন নিভায়।
কয়েক জন স্থানীয়, বাসিন্দা জানান, সচিব কেন কি কারণে এত রাতে ইউনিয়ন পরিষদে আসলেন এবং তিনি যাওয়ার পরে রাতের বেলায় আগুন লাগলো।এটা অব্যশই ক্ষতিয়ে দেখা দরকার সচিবের সাথে আগুন লাগার কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা। সচিবের সাথে চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তিনিও এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা।
তারা সাংবাদিকদের আরো অভিযোগ করে বলেন,এই সচিব এখানে আসার পর থেকে এই এলাকার মানুষকে প্রচুর জ্বালিয়ে এবং কি সামান্য কাজের জন্য গরিব মানুষদের হাজার হাজার টাকার চাপ দেন তিনি টাকা ছাড়া কোন কাজ করে দেন না।তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না আমরা চাই তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তিনার মতো মাদকাসক্ত সচিব যেন এই পরিষদে চাকরি না করতে পারে সে ব্যপারে প্রশাসন যেন ব্যবস্থা নেই।
ইউপি সদস্য রফিক বলেন,তদন্তে আগের রাতেই গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলো সব পরিকল্পিত ভাবে জ্বালানো হয়েছে। এর সাথে যাদের সম্পৃক্ততা আছে তাদের বিরুদ্ধে আইন আনুক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।এই ফাইল পুরে যাওয়াতে আমাদের তদন্ত অনেক টা কস্ট সাধ্য হয়ে যাবে।
ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য তহমিনা বলেন,এটা পরিকল্পত ভাবে ঘটানো হয়েছে। তদন্ত যেন না করা যায় যারা এটা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ইউপি সচিব পলাশ চন্দ্র রায় জানান, আমি রাতে আমার কাজ শেষে বের হয়ে যায়। তখন সব ঠিক ছিলো। সকালে খবর পেয়ে এসে দেখি সব গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন ইউনিয়ন মেম্বারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত টিম আসার কথা আছে আজকে। এত রাতে ইউনিয়ন পরিষদে কেন আসছিলেন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিকদের বলেন, আমি রাউতনগর গেছিলাম রাস্তা খারাপ থাকায় আমি এই রাস্তা দিয়ে এসেছি, এবং আমার রুমে প্রবেশ করেছি আমার কাজ শেষে আমি চলে গেছি। আগুনের ঘটনা আমি সকালে শুনতে পেরেছি। আগুনে পুরে যাওয়া কাগজপত্র গুলোর জন্য তদন্ত করতে কোন সমস্যা হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,এসব কাগজের কারণে কোন সমস্যা হবে না, এটা কোন ব্যপার না। মাদকের বিরুদ্ধে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজি হননি।
ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হেদায়েতুল্লাহ বলেন, আজকে ইউনিয়ন পরিষদে তদন্ত কমিটি আসবে আর রাতেই আগুন লাগলো, সচিব কে দিনের বেলায় পাওয়া যায় না কিন্তু তিনি রাতে কেন আসছিলেন। আগুনের সাথে সচিবের কোন যোগসাজস আছে কিনা সেটা খতিতে দেখা হোক। তিনি আরো বলেন,চেয়ারম্যান গত ১৬ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন।
থানার তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল মাজলুবিন জানান, এই ইউনিয়ন পরিষদে কোন সিসিটিভি না থাকায় বলা যাচ্ছে না কিভাবে আগুন লাগলো। আগুনে পরিষদের কিছু নথি পুড়ে গেছে। এবিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।