Satyajit Das:
কিছু গল্প শোকের,কিছু গল্প প্রতিবাদের। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা নিরীহ হিন্দু পরিবারের গল্প আজ শিলিগুড়ির মাটিতে যেন আরও একবার মর্মান্তিক বাস্তবতার সামনে দাঁড় করালো আমাদের। আশ্রয়ের আশায় প্রাণ হাতে নিয়ে যারা সীমান্ত পেরিয়েছিল,তাদের শেষ ভরসাটুকুও আজ ভেঙে পড়েছে পুলিশের হাতকড়ায়।
রংপুর থেকে বাড়িঘর বিক্রি করে ৯ জনের এই পরিবার শিলিগুড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছিল। মনে হয়েছিল— অন্তত এখানেই বাঁচা যাবে। কিন্তু সে আশা বেশি দিন টিকল না। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি পুলিশকে খবর দিয়ে “অবৈধ অনুপ্রবেশকারী” ট্যাগ লাগিয়ে গ্রেফতার করালো তাদের। তারওপর শিলিগুড়ি পুলিশের ভাষ্যে এ ঘটনাকে বলা হচ্ছে ‘বড় সাফল্য’!
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে— সাফল্য কার জন্য? কার বিরুদ্ধে? হাজার হাজার রোহিঙ্গা (বিভিন্ন ধর্মালম্বী) ভারতে বছরের পর বছর অনায়াসে বাস করছে, অথচ ঘরহারা কয়েকজন হিন্দু শরণার্থী হয়ে উঠল রাষ্ট্রের চোখে ‘অপরাধী’? কোথায় গেল মানবিকতা, কোথায় গেল সেই সভ্যতার দাবি?
আরেকটি গভীর প্রশ্ন এখানে অবধারিতভাবে উঠে আসে; স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের ভূমিকা। অভিযোগ আছে,ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক পঞ্চায়েত সদস্য টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্যান কার্ড,আধার কার্ড, এমনকি ভোটার আইডি তৈরি করে দিয়েছেন। তাহলে দায় কি কেবলমাত্র অসহায় শরণার্থীদের? যারা চরম অনিশ্চয়তায় জীবন বাঁচানোর পথ খুঁজছিল?
একজন বাংলাদেশি হিন্দুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে হয়-শেখ হাসিনা সরকারের আমলেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। মন্দির পোড়ানো, জমি দখল, নারী নির্যাতন এখন যেন নিত্যদিনের চিত্র। সরকারের পরিবর্তনের পরেও এই নিপীড়ন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যারা জীবন বাঁচাতে পারছে,তারা দিশেহারা হয়ে সীমান্ত পেরোচ্ছে। কিন্তু সীমান্তের ওপারেও তাদের ভাগ্যে জুটছে না আশ্রয় বা সম্মান।
আসলে এটি শুধু দুই দেশের রাজনৈতিক ইস্যু নয়; এটি একটি মানবিক সংকট। মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বোঝা যায়,এরা অপরাধী নয়,এরা হলো সমাজ ও রাজনীতির বলি। তাদের দোষ একটাই— তারা হিন্দু এবং তারা দুর্বল।
ভারতের উচিত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্যাতিত হিন্দু শরণার্থীদের জন্য মানবিক নীতি তৈরি করা। বাংলাদেশেরও উচিত নিজেদের দেশে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সবচেয়ে জরুরি হলো— প্রশাসনিক দুর্নীতি ও মানবিকতার অভাবের বিরুদ্ধে দুই দেশের সাধারণ মানুষের সোচ্চার হওয়া।
শিলিগুড়ির এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল; দক্ষিণ এশিয়ার সংখ্যালঘু হিন্দুদের দুর্দশা এখনও কতটা গভীর,কতটা উপেক্ষিত। এখন সময় এসেছে-মানবিকতার পক্ষে,সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর।