সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে দেশের অগ্রগতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন-পূর্ব সময় স্বভাবতই কঠিন ও সংবেদনশীল। এই সময় পুলিশ বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে, যেন পরাজিত শক্তি কোনোভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।
মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বক্তব্যে পুলিশ বাহিনীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর দূরত্ব বেড়েছে, যার খেসারত দিতে হয়েছে অনেক সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকেও। তবে বর্তমান সরকার সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশকে জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত করতে কাজ করছে।
ড. ইউনূস জানান, স্বৈরাচার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এখন তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জনগণের আস্থা ফেরাতে পুলিশ বাহিনীকে আরও পেশাদার ও মানবিক হতে হবে। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা বজায় রেখে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি নতুন দিগন্তের পথে এগোচ্ছে। বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত একটি ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন আমরা দেখছি, যার ভিত্তি হতে পারে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে পুলিশের নিরপেক্ষতা এবং প্রতিটি ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও যোগ করেন, এই সময় আমাদের যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ অশুভ শক্তিগুলো দেশের স্বপ্ন ও ঐক্য ধ্বংস করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পুলিশের দায়িত্ব অপরিসীম।
এ বছর ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। পুলিশকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে এবং সব প্রার্থীকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।
তিনি বলেন, “আমরা যদি এবার ব্যর্থ হই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের দায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।”