নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন এবং ঘুষ-দুর্নীতির মতো গুরুতর অভিযোগে দেশের ৩৬টি এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) অফিসে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এলজিইডি কার্যালয়গুলোতে একযোগে মাঠে নামে দুদকের ৩৬টি এনফোর্সমেন্ট টিম।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ জানান, এলজিইডির বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম ও গাফিলতির বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে দুদকের কাছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই শুরু হয়েছে এ অভিযানের কার্যক্রম। অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদকের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও মনির মিয়া। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুরে একযোগে অভিযান চালানো হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় অভিযান প্রসঙ্গে দুদকের জেলা কার্যালয়ের প্রধান উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, “নিম্নমানের নির্মাণ, বিল জালিয়াতি এবং ঘুষ লেনদেনের মতো অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্তে নেমেছি। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগেও সমানতালে চলছে অভিযান। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম (১ ও ২), কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ ও জামালপুর, সিলেট বিভাগে সিলেট ও হবিগঞ্জ, খুলনা বিভাগে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট ও ঝিনাইদহ এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে রাজশাহী বিভাগের পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী ও নওগাঁ এবং রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও কুড়িগ্রামেও চলছে তল্লাশি।
প্রতিটি জায়গা থেকেই উঠে আসছে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে দুর্নীতির চিত্র। যেমন—নির্ধারিত নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করে সস্তা ও নিুমানসম্পন্ন উপকরণ দিয়ে কাজ শেষ করা, প্রকল্প শেষ না করেই বিল উত্তোলন, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং নির্মাণকাজে নজরদারির অভাব।
দুদকের এই অভিযান থেকে স্পষ্ট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতিকে আর সহ্য করবে না সংস্থাটি। এই উদ্যোগ শুধু দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রতিফলন নয়, বরং দেশের জনগণের করের টাকায় পরিচালিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার একটি দৃঢ় পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
চলমান অভিযানের ফলাফল ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এখন দেশের জনগণের নজর কাড়ছে।