Shahjahan Ali Manon, Saidpur (Nilphamari) Representative:
ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ভুক্তভোগীর পুরো পরিবারকে ক্ষমতার জোরে এলাকা ছাড়া করাসহ মেরে লাশ পুঁতে রাখার হুমকি দিয়েছে এক ইউপি সদস্য। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অসহায় পরিবারটি। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছে ওই পরিবারের ১০ জন সদস্য। এর মধ্যে দুগ্ধপোষ্য ২ টিসহ ৬ টি শিশু। এমন অভিযোগ করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেলপুকুর বাঁশতলীপাড়ার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী ১ সন্তানের জননী মোছা. নিশি (২৮)।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২ টায় উপশহর ঢেলাপীর উত্তরা আবাসন এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মিডিয়ার কাছে এই অভিযোগ তুলে ধরেন নিশি। এসময় উপস্থিত ছিলেন, নিশির বাবা ওমর আলী, মা লাভলী বেগম, চাচী খাদিজা বেগম ও ছোট বোন মিস্পা আক্তার। এছাড়াও এলাকার সাবেক মেম্বার সেকেন্দার আলীসহ কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তবে নিশির স্বামীসহ ওই পরিবারের কেউ ছিলেন না।
লিখিত অভিযোগ পাঠ করে শোনান নিশি। এতে তিনি বলেন, আমার বাড়ি কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের মেম্বার নুরনবী সরকার আমার প্রতিবেশী। স্বামীর আর্থিক অস্বচ্ছলতার সুযোগে মেম্বার প্রায়ই আমার বাড়িতে এসে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সখ্যতা গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দৈহিক সম্পর্ক তৈরি করে। একাধিকবার মেম্বার আমার সাথে দৈহিক মেলামেশা করেছে। এভাবে সে আমাকে ভোগ করে চললেও দীর্ঘ দিনেও বিয়ে করেনি। একারণে তার সাথে এই গোপন সম্পর্কের ইতি টানি। ফলে সে আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল।
হঠাৎ গত ৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আমাকে বাড়িতে একা পেয়ে ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমার আর্তচিৎকারে পরিবারের লোকজন পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে মেম্বার কৌশলে পালিয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে মেম্বার তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে নাটক সাজিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে বদনাম রটায়। এমনকি আমার মা ও ছোট বোনকেও নষ্টা নারী হিসেবে চিহ্নিত করে অপবাদ দেয়।
এই অপবাদ দিয়েই মেম্বার গং ক্ষ্যান্ত না হয়ে সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে আমাদের জোর করে বের করে দেয়। বাড়িঘর ভাঙ্চুর করে। ঘরে ঢুকে তোষকের নিচে রাখা নগদ ৮০ হাজার টাকা চুরি করে। এমনকি যাওয়ার সময় রাইস কুকার, পানির পাম্প, দুটি খাট,, গ্যাসের চুলা, স্টিলের আলমারি, দুটি লোহার আলনা, দুটি টিভি, দুটি স্টিলের টেবিল, ১০ টা প্লাস্টিকের চেয়ার, তিনটি সেলিং ফ্যানসহ আমার সকল সাংসারিক জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
যাওয়ার সময় তারা হুমকি দিয়ে যায় যে, রাতের আধারে একাকী পাইলে আমাকে মেরে পুতে ফেলবে। আর যদি এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিবে। তাদের এমন নির্যাতন ও হুমকির ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় শিশু সন্তানসহ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকতে বাধ্য হচ্ছি। এতে খুবই মানবেতর অবস্থায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
কারণ থানায় অভিযোগ দিলেও ওসি তা নেয়নি। এমনকি আদালতে মামলা করার পর থানায় তদন্তের জন্য পাঠালেও ওসি তদন্ত রিপোর্ট দিতে গড়িমসি করছেন। তিনি সঠিক তদন্ত না করে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এই ফাঁকে মেম্বার ও তার লোকজন নানাভাবে হুমকি দিয়ে চলেছে। ফলে আমার অসহায় পরিবার অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছি। আমি আমার সাথে কৃত অন্যায়ের ন্যায় বিচার চাই।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নুরনবী সরকারের সাথে কথা হলে, তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব মিথ্যে। মূলত: ওই পরিবারটি খুবই নোংরা। নিশি, তার মা ও বোন দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত। নিজ বাড়িতেসহ শহরের বিভিন্ন হোটেল রিসোর্টে গিয়ে তারা এই অপকর্ম করে। এলাকাবাসী বিষয়টা নিয়ে একাধিকবার তাদের সতর্ক করলেও ঘৃণ্য কাজ থেকে তারা বিরত হয়নি।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন এলাকাবাসী তাদের অপরাধের প্রতিবাদ করতে গেলে তারা অশালীন গালিগালাজ ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এতে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর চড়াও হয়। তবে খবর পেয়ে আমি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। আর এখন আমার বিরুদ্ধেই মিথ্যে অপবাদ দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে। এজন্য লোকজন তাদের উপর চরম নাখোশ। যা এলাকায় গেলে যে কোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারবেন।
তারা নষ্ট প্রকৃতির কারণে এলাকার কেউই তাদের পক্ষে নেই। আমার প্রতিপক্ষ মেম্বার সেকেন্দার আলীর অনৈতিক প্ররোচনায় ওই পরিবারটি অহেতুক আমার মানহানীর জন্য ষড়যন্ত্রমুলক হয়রানির পথে চালিত হয়েছে। যা এলাকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবী করেন তিনি।