মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক কৌশল, যদিও সফল হতে পারে, তবুও এটি আমেরিকানদের জীবনে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পারে, এমনটি আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন, যদি আগামী বছরগুলোতে শুল্কের হার ২০%, ৩০% বা ৫০% হয়, তবে মার্কিন জনগণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। এর ফলে, আমেরিকান জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে, যা ইতিমধ্যেই অনেক মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
হোয়াইট হাউসে ১০০ দিন পার করার পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ৭০ বছরে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য এত কম। তার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপের প্রতি আস্থা মাত্র ৩৯ শতাংশ নাগরিকের, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তার নীতির প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। শুল্ক নীতি এবং মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করার পদক্ষেপের কারণে ট্রাম্পের জনসমর্থন দ্রুত কমে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন শেয়ার বাজারে ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, বিমান সংস্থাগুলি ফ্লাইট কমাচ্ছে, এবং শীর্ষ কোম্পানিগুলি তাদের বার্ষিক পূর্বাভাস পরিবর্তন করছে। অনেক খুচরা বিক্রেতা চীনে তৈরি পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে, এবং চীন ও আমেরিকার মধ্যে অর্থনৈতিক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে, বেশ কিছু বাণিজ্য চুক্তি থমকে গেছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।
এর মধ্যে, ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘বাণিজ্য নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরে বলেছেন, তিনি একটি মৌলিক কৌশল গ্রহণ করেছেন যা ১৯ শতকের স্বর্ণযুগ পুনরুদ্ধার করবে। তাঁর লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করা এবং বিদেশী বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের প্রবেশ বাড়ানো।
তবে, যদিও ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে যে এটি একটি সুপরিকল্পিত কৌশল, বাস্তবে ট্রাম্পের পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। বিশ্লেষকরা জানান, যদি শুল্ক কৌশল সফল হয়, তবুও এটি দেশীয় বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে দেবে। ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন যে, শুল্কের পরিমাণ বাড়লে, মার্কিন জনগণের জন্য মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য। যদিও তিনি দাবি করছেন কর কমানোর মাধ্যমে এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে, কিন্তু বর্তমানে তা ধীরগতিতে চলছে, যা তার পরিকল্পনা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করছে।
এই পরিস্থিতি মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে, এবং তারা উদ্বিগ্ন যে, ট্রাম্পের কৌশল কেবল তাদের জীবনের ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে, বরং বাজারে পণ্যের সংকটও তৈরি করতে পারে। বড় বড় কোম্পানিগুলি এবং ছোট ব্যবসাগুলি এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তীব্র সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।