মনির হোসেন, বেনাপোল:
দিন যত গড়াচ্ছে সূর্যের দাপট তত বাড়ছে। সেই সাথে জনজীবনে নেমে আসছে চরম অস্বস্তি। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে মানুষ। শহর থেকে গ্রাম,যশোর জেলার শার্শা উপজেলা সর্বত্র হাসফাঁস অবস্থা। গরমে সবথেকে বেশি করুণ অবস্থায় রয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। ভ্যান চালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে দিন আনা দিন খাওয়া প্রতিটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে এর থেকে পরিত্রাণের কোন সম্ভাবনা দেখছে না স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
স্বস্তিতে নেই সাধারণ ব্যবসায়ীরাও। দিনেরবেলা বিপনিবিতানগুলোতে খরিদ্দারের দেখা মিলছে কম। খাদ্যাভাসেও এসেছে পরিবর্তন। বাজারে বেড়েছে সবজির দাম। মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকের অবস্থা খুবই নাজুক। গরমের কারণে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিতে হচ্ছে। তাও অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছেনা। এরইমাঝে শরীর সুস্থ রাখতে জীবনাচারে সকর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
শার্শা উপজেলা বেশ কয়েকটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে,
আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) দিনটিও থাকবে শুষ্ক ও বৃষ্টিহীন। ফলে আজও গরমের দাপট থেকে স্বস্তির আশা নেই।
এদিন সকালে দেওয়া ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, আকাশ থাকবে পরিষ্কার। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় কয়েকদিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। এরমধ্যে দুইদিন দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে এই জেলায়। তা ছিল বুধবার (২৩ এপ্রিল) ৩৯ দশমিক আট ডিগ্রি এবং মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ৩৭ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) উপজেলা সর্বেচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ভ্যানচালক লুতু বলেন, গরমে সামান্য সময় ভ্যান চালিয়ে কিছুক্ষণ জিরুতি (বিশ্রাম নেওয়া) না পারলি আর কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘দুই তিনডে ভাড়া মারার পর ছাওয়ায় বসে কিছু না খেয়ে আর ভাড়া মারার ইচ্ছা হয় না’।
বেনাপোল বাজারের সবজি বিক্রেতা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘ঠাঁ ঠাঁ রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। রাস্তা থেকে বের হচ্ছে গরম হাওয়া। তার পাশে ছাতির তলায় বসেও বাঁচা যাচ্ছে না। খরিদ্দাররা ভোরের দিকে এসে সামান্য কেনাকাটা করে চলে যাচ্ছে’
তিনি বলেন, ‘বাজারে সবজি কম, দামও বেশি। তারওপর খরিদ্দারও কম। কি যে যন্ত্রণায় আছি’।
শার্শা উপজেলার ৩ নং বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ধান্যখোলা গ্রামের কৃষক ইয়ানুর রহমান বলেন, যে গরম আর রোদ পড়েছে মাঠে টিকে থাকা দায়। কিন্তু উপায় নেই। ঝড়-বৃষ্টির আগে যদি মাঠের পাকা ধান উঠোতি না পারি তাহলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে’।
একই কথা বলেছেন ২নং লক্ষণপুর ইউনিয়নের বহিলাপোতা গ্রামের ওমর আলী। তিনি জানান, এখনো মাঠে প্রচুর ধান পাকা পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে তা কাটা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিক যা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে মজুরি দিতে হচ্ছে অনেক বেশি। ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাই মাঠে একযোগে কাজ করে ধান গোয়ালে উঠানোতে সময় পার করছেন’।
তবে, গরমের কারণে কাজ খুব একটা এগুনো যাচ্ছে না-বলেন এই কৃষিজীবী।
বেনাপোল বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। গরমের কারণে দিনের বেলায় দোকানগুলোতে খুব একটা খরিদ্দার আসে না। সন্ধ্যায় সামান্য কয়েকজনের আনাগোনা দেখা যায়।’
তিনি জানান, বাজার নুর শপিং কমপ্লেক্স, বড়বাজার, সহ সকল স্থানে বিপনিবিতাগুলোতে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
তিনি আরো জানান, গরমে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে ভাজাপোড়া বিক্রি একেবারে কমে গেছে। বেড়েছে লাচ্ছি আর ফালুদার চাহিদা।
এরূপ পরিস্থিতিতে বাইরে সাবধানতার সাথে চলাচলের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল। তা না হলে পানি শূন্যতা থেকে জন্ডিস ও ডায়রিয়া হওয়ার আশংকার কথা বলেছেন তিনি। এমনকি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে এই গরমে-বলেন ডাক্তার রাসেল।
তিনি বলেন, গরমের তীব্রতায় বিশেষ কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে ঘন ঘন পানি খেতে হবে। একটা নিয়মিত বিরতিতে পানি খেলে পানি শূন্যতা থেকে থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডায়রিয়া এবং জন্ডিস থেকে রক্ষা পেতে ভাজাপোড়া বিশেষ করে তেল জাতীয় খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন।