বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত সংস্থাটির দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এ বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে কম।
শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে, যা আগের পূর্বাভাসের তুলনায় ০ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট কম। তবে ২০২৬ সালে তা কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিশ্বব্যাংক মনে করছে, অঞ্চলটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেকসই করতে হলে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় করের হার তুলনামূলকভাবে বেশি মনে করা হয়, প্রকৃত কর আদায়ের হার বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল অঞ্চলের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার গড় সরকারি রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলে এই হার ২৪ শতাংশ। এর পেছনে কর ব্যবস্থার জটিলতা, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রভাব এবং কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে দায়ী করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, “নিম্ন কর-আদায় দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক ঝুঁকির মূল ভিত্তি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়টিতে এটি অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।”
অঞ্চলের অন্যান্য দেশের অবস্থাও বেশ নাজুক। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ২ দশমিক ৫ শতাংশে, নেপালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। পাকিস্তান ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ভারতের ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধি সামান্য কমার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে—২০২৪-২৫ অর্থবছরে এটি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা পরের অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নামবে। ভুটানে কৃষির দুর্বলতায় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে, তবে জলবিদ্যুৎ খাতে অগ্রগতির কারণে ২০২৫-২৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে। মালদ্বীপে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রভাব থাকায় প্রবৃদ্ধি থাকবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, “গত এক দশকের নানা সংকটে দক্ষিণ এশিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখনই সময় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কৃষি আধুনিকীকরণ ও বেসরকারি খাতের সক্রিয়তায় কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার।”
প্রতিবেদনে কর সংস্কার, প্রযুক্তিনির্ভর কর আদায় ব্যবস্থা, কর ফাঁকি রোধ, কর অব্যাহতি সীমিতকরণ এবং পরিবেশ দূষণের ওপর কর আরোপের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।