রুশাইদ আহমেদ:
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বেশকিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার জালিয়াতির বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছে নানা মহলে।
এরই অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের অক্টোবরের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু সালেহ মো. ওয়াদুদুর রহমান (তুহিন ওয়াদুদ), ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী পলাতক গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমানের স্ত্রী ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোছা. আইরিন আক্তারের নিয়োগ জালিয়াতির বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে ক্যাম্পাসে।
অভিযোগ রয়েছে, ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯’- অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা শুধু আবেদনের জন্য যোগ্য হলেও তুহিন ওয়াদুদ, মো. ইউসুফ আলী এবং মোছা. আইরিন আক্তার তা ছাড়াই পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এই বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগপত্রও প্রেরণ করা হয়। স্থানীয় এবং জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ওই তিন শিক্ষকের নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তথ্যানুসন্ধান (ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং) কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ফেরদৌস রহমান।
তবে এই কমিটি গঠনের পর প্রায় ছয় মাস অর্থাৎ অর্ধ বছর পার হতে চললেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে জমা পড়েনি তদন্তের প্রতিবেদন। এমতাবস্থায় সত্বর প্রতিবেদন জমা সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, “ফ্যাসিবাদী আমলে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকেই অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ থেকে শুরু করে নানারকম সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন। বিশেষ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানারকম অনিয়ম হয়েছে এবং যোগ্যতা না থাকার পরেও বিভিন্ন মহলের সুপারিশ নিয়ে অনেকে শিক্ষক হয়েছেন।”
আরমান আরও বলেন, “কয়েকজন শিক্ষকের (নিয়োগ জালিয়াতির) বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টা আমার জন্য হতাশাজনক। আমরা আশা করব প্রশাসন দ্রুত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু সমাধান করবে।”
তথ্যানুসন্ধান কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “আমাদের তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে। এই বিষয়ে আমিসহ তদন্ত কমিটির সদস্যরা মিটিং এ বসেছিলাম। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।”
এই বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি তদন্ত রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। তথ্যানুসন্ধান কমিটির কনভেনর হিসেবে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার দ্বায়িত্ব রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেট মিটিংয়ের আগেই রিপোর্ট হাতে পেয়ে যাবো বলে আশা করছি। এরপর এই বিষয়ে আমরা সিন্ডিকেট মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আমরা সবসময় যেটা সত্য ও ন্যায্য, সেটার পক্ষেই থাকব।”