সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইন ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দান ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন এই আইনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় সহিংস বিক্ষোভে প্রাণ গেছে অন্তত তিনজনের, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫০ জনেরও বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাইকোর্টের নির্দেশে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে আধাসামরিক বাহিনী বিএসএফ।
এই বিতর্কিত আইন সংশোধনের ফলে মুসলিমদের ধর্মীয় দান—যেমন মসজিদ, মাজার, কবরস্থান, দোকান ও কৃষিজমিসহ ঐতিহাসিক ওয়াকফ সম্পত্তি—ব্যবস্থাপনায় অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে মুসলিম সমাজে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এই সম্পত্তিগুলো সরকারের হস্তক্ষেপে বাজেয়াপ্ত, ধ্বংস বা বিরোধের মুখে পড়তে পারে।
বিরোধী দল ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, এই আইন মূলত ভারতের বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি আক্রমণ, যাদের সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছেন, “এই আইন আজ মুসলমানদের টার্গেট করলেও ভবিষ্যতে এটি অন্য সম্প্রদায়ের ওপরও প্রয়োগের পথ খুলে দেবে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রাজ্যে এই আইন কার্যকর হবে না। তবে তাতে উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদে শুক্রবার ও শনিবার বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট দ্রুত বিএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। বিএসএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাহিনীকে কেবলমাত্র স্থানীয় পুলিশের সহায়তা করার জন্য পাঠানো হয়েছে, স্বাধীনভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নয়।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার আইনটিকে স্বচ্ছতা আনার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ বলে দাবি করছে। তাদের ভাষ্য মতে, পূর্বের ওয়াকফ প্রশাসনে ছিল জটিলতা ও অপব্যবস্থাপনা, যা সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিকার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট মুসলিম সম্প্রদায় মনে করছে, ভারতের সংবিধানে থাকা ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতিকে উপেক্ষা করেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে, যার প্রভাব তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার হরণের দিকে যাচ্ছে।
Source: Al Jazeera