ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার নতুন এক বিশাল প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এই ‘গুরুত্বপূর্ণ বছরে’ ইউরোপীয় মিত্ররা একসঙ্গে ২১ বিলিয়ন ইউরো (২৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৮ বিলিয়ন পাউন্ড) মূল্যের সহায়তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই সহায়তার অর্ধেকেরও বেশি—প্রায় ১১ বিলিয়ন ইউরো—জার্মানি সরবরাহ করবে আগামী চার বছরের মধ্যে। ব্রাসেলসে NATO সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ইউক্রেন ডিফেন্স কন্ট্যাক্ট গ্রুপের ২৭তম বৈঠকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে ইউরোপীয় নেতারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট শূন্যতা তারা পূরণ করতে প্রস্তুত।
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস জানান, জার্মানি ইউক্রেনকে ১ লক্ষ গোলা, ২৫টি ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল, ১৫টি যুদ্ধ ট্যাংক, ১০০টি গ্রাউন্ড সার্ভেইলেন্স রাডার, ১২০টি ম্যান-পোর্টেবল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (MANPADS) এবং চারটি IRIS-T আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্রসহ পাঠাবে।
“ইউক্রেনকে একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত করতেই হবে, তাহলেই শান্তি আলোচনার মাধ্যমে টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব,” বলেন পিস্টোরিয়াস।
যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে একত্রে ৪৫০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার আওতায় ইউক্রেন পাবে রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাংক মাইন, যানবাহন মেরামত ও লক্ষাধিক ড্রোন। এই অর্থ বর্ষের শুরুতে যুক্তরাজ্যের ঘোষিত ৪.৫ বিলিয়ন পাউন্ড সহায়তার অংশ।
ব্রাসেলসে উপস্থিত ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেন, “চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাশিয়া ১০,০০০ গ্লাইড বোম্ব ফেলেছে এবং প্রতিদিন প্রায় ১০০টি করে একমুখী ড্রোন হামলা চালিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হতাহতের পেছনে ড্রোনই দায়ী।”
এদিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বৈঠকে ইউরোপকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারা নেতৃত্ব নিয়েছেন এবং এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় ভরসা।” তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও পাশে আছে এবং প্রতিরক্ষা সহায়তা দিচ্ছে, যদিও তাদের উপস্থিতি এখন তুলনামূলকভাবে সীমিত।
এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভার্চুয়ালি অংশ নেন। জার্মান মন্ত্রী পিস্টোরিয়াস জানান, এটি ‘সময়সূচির’ কারণে হলেও অংশগ্রহণটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
এই আলোচনার মধ্যেই মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আবারও রাশিয়ায় গেছেন কূটনৈতিক আলোচনার জন্য। তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যেখানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন।
এদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের উত্তর সীমান্তবর্তী সুমি অঞ্চলের ঝুরাভকা গ্রাম দখল করেছে। তবে ইউক্রেন সরকার এখনো তা নিশ্চিত করেনি। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, সুমি সীমান্তের ওপারে প্রায় ৬৭ হাজার রুশ সেনা জড়ো হয়েছে একটি সম্ভাব্য বড় আক্রমণের জন্য।
সাহায্য ঘোষণা এবং যুদ্ধক্ষেত্রের ঘটনাপ্রবাহ একসাথে ইঙ্গিত দেয়, যুদ্ধ এখনো দীর্ঘ হবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলো নতুন করে নেতৃত্ব নিয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প ব্যক্ত করেছে।