আবু সাঈদ গাজীপুর প্রতিনিধি :
ঢাকা থেকে ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল গড়ের দূরত্ব মাত্র ৪০ কি.মি.। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই স্থানটি সব সময়ই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। এমন একটি জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে গাজীপুর সাফারি পার্ক। পশু-পাখির অনেকটা কাছাকাছি আসার অনুভূতি পাবেন গাজীপুর সাফারি পার্কে। গাড়ির ভেতর বসে দেখতে পাবেন নানান রকম পশু-পাখি। ইচ্ছে করলে আপনি যে কোনো দিন পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে।
এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার বৃহত্তম সাফারি পার্ক। উন্নত বিশ্বের আধুনিক সাফারি পার্কের ন্যায় ৩৬৯০ একর জায়গা নিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। পার্কে ১২২৫ একর জায়গা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে কোর সাফারি, ৫৬৬ একর জায়গা নিয়ে সাফারি কিংডম, ৮২০ একর জায়গা নিয়ে বায়োডাইভার্সিটি, ৭৬৯ একর এলাকা নিয়ে এক্সটেন্সিভ এশিয়ান সাফারি। পার্কে বন ও অবমুক্ত প্রাণির নিরাপত্তার জন্য ২৬ কিলোমিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটক গাড়িতে বসে বিচরণ অবস্থায় বন্যপ্রাণী দেখতে পারবেন। পার্কে অবমুক্ত করা হয়েছে বাঘ, সিংহ, ভালুক চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, ওয়াইল্ডবিষ্ট, ব্লেসবক, উটপাখি, ইমু প্রভৃতি।
এ পার্কে স্থাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকে বন ও প্রাণী বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, পার্ক অফিস, বিশ্রামাগার, ডরমেটরি, বন্যপ্রাণী হাসপাতাল, কুমিরপার্ক, লিজার্ড পার্কসহ ঝুলন্ত ব্রিজ, বাঘ পর্যবেক্ষণ রেস্তরাঁ, সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তরাঁ, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, ইকো রিসোর্ট, ফুডকোর্টসহ আরও অনেক কিছু। পর্যটকদের সুবিধার জন্য রয়েছে বাস ও সাফারি জীপ। সাফারি বাস ও জীপে পর্যটকরা প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণরত বাঘ, সিংহ ও ভালুক দেখতে পারবেন। এছাড়াও দেখা যাবে জিরাফ, জেব্রা, ব্লু ওয়াইল্ডবিস্ট, ব্ল্যাক ওয়াইল্ডবিস্ট, ব্লেস বকসহ বিভিন্ন প্রাণি।
পার্কে প্রবেশ ফি: প্রবেশ ফি বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা। এই প্রবেশ ফি দিয়ে পার্কে ঢুকলেই আপনি সব দেখতে পাবেন না। পার্কে প্রবেশের পর সবকিছু দেখার জন্য আলাদা টিকেট কাটতে হবে।
যেভাবে যাবেন: মহাখালী থেকে ভালুকা, ময়মনসিংহ বা শ্রীপুরের বাসে উঠে গাজীপুরের বাঘের বাজার নামতে হবে। যানজট বিবেচনা সাপেক্ষে ২ ঘণ্টা লাগবে এ বাজারে যেতে। এরপর বাস থেকে নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশায় পার্কে যাওয়া যাবে। মাত্র ২০ মিনিট পরই আপনি পৌঁছে যানে এ পার্কে।
দুপুরে সরজমিনে পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পার্কে টিকেট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে মূল গেটে প্রবেশ করছেন। পার্কে প্রবেশ করে দর্শনার্থীরা পার্কের মূল যে আকর্ষণ কোর সাফারিতে প্রবেশ করতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কোর সাফারির আলাদা বেষ্টনীতে উন্মুক্ত পরিবেশে রয়েছে বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, জেব্রা, জিরাফসহ আফ্রিকান বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর অবাধ বিচরণ দেখতে সেখানেও বাসে উঠার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়াও পার্কের অন্যান্য দেশি-বিদেশি পাখিশালা, প্রাণী বেষ্টনীতেও ভিড় করছেন তারা। এছাড়াও আফ্রিকান সাফারিতে রয়েছে নীলগাই, সাম্বার হরিণ, গয়াল বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেখে কিন্তু দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়েছেন।
গাজীপুর সাফারি পার্কে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকার একটি কারখানার প্রশাসনিক নির্বাহী সাঈদ হোসেন। তিনি জানান, সোমবার ঘোরার জন্য দিনটির আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে ছিল। ‘সাফারি পার্কের প্রাণীজগৎ, কোর সাফারি, হাতিশালা, কুমির বেষ্টনী, বিচিত্র মাছের আনাগোনা, জলহস্তী, অজগর, রঙ-বেরঙের পাখিসহ বিলুপ্তপ্রায় কয়েক জাতের প্রাণি দেখে মুগ্ধ হয়েছি।শিশু দর্শনার্থী সুমাইয়া জাহান টুম্পা জানায়, সাফারি পার্কের নানা ধরনের পাখি ও ময়ূর দেখে তার বেশি ভাল লেগেছে।
এ বিষয়ে সাফারি পার্ক গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্কে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিচ্ছি। কোর সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য সাতটি অবজারভেশন গাড়ি চলাচল করছে। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য পুরো পার্কটি প্রস্তুত রয়েছে।