প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার রাতে চীনে পৌঁছেছেন। তিনি আজ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টার এই সফর বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূসের সফরের প্রথম দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ দ্য পিপলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যেখানে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হবে।
অধ্যাপক ইউনূসের উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়ে বলেছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা সকাল ১০টায় চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দুপুরের আগে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগে’ অংশগ্রহণ করবেন। এই আলোচনায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের বাজারে সম্ভাবনাগুলি তুলে ধরা হবে।
চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে ব্যবসা স্থাপন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এই অনুষ্ঠানে তাদের জন্য চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন এবং সম্ভাব্য সহযোগিতার সুযোগগুলিও তুলে ধরবেন।
আজকের অনুষ্ঠানটির একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করা, বিশেষত বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বিনিয়োগের দিক থেকে। চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে সাশ্রয়ী এবং লাভজনক বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলি দেখতে পাবেন, যা তাদের দেশীয় ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস একই স্থানে তিনটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন, যা টেকসই অবকাঠামো, জ্বালানি বিনিয়োগ, এবং যুব উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনার জন্য পরিকল্পিত। তিনি ‘বাংলাদেশ ২.০’ উৎপাদন ও বাজার সুযোগ এবং সামাজিক ব্যবসা সম্পর্কিত আলোচনা করবেন, যা চীনা ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলি তুলে ধরবে। এই গোলটেবিল আলোচনা চীনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সম্মানে আয়োজিত একটি নৈশভোজে যোগ দেবেন। এই নৈশভোজে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; সড়ক পরিবহণ ও সেতু; এবং রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী এবং সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত থাকবেন।
এই সফরের লক্ষ্য শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন নয়, বরং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলোর একটি অংশ, যেখানে চীনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিশেষত অবকাঠামো এবং জ্বালানি খাতে, উন্নতির জন্য বড় ধরনের সহযোগিতার একটি উৎস হতে পারে।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে এবং দুটি দেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে। এর ফলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সমঝোতা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে এই সফরের মাধ্যমে সামাজিক ব্যবসা এবং যুব উদ্যোক্তা উন্নয়নেও বাংলাদেশ আরও বেশি সমর্থন পাবে। তিনি বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান সামাজিক ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরবেন এবং চীনা ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশের সামাজিক উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের যুব সমাজের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর চীন ও বাংলাদেশের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়ের সুযোগ সম্পর্কে অবগত করা এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি করা এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এই সফর শুধুমাত্র ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের চীন-সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।