কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মিয়ানমারের বন্দি শিবির থেকে ১৯ জন বাংলাদেশিকে মুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) তাদের মুক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা রাত পৌনে ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
মানবপাচারের ফাঁদে পড়া বাংলাদেশিরা
ভালো চাকরি ও উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচারকারীরা এই বাংলাদেশিদের প্রথমে থাইল্যান্ডে নিয়ে যায়। পরে তাদের মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে পাচারকারীরা তাদের দিয়ে সাইবার অপরাধমূলক কাজ করাতো। কেউ রাজি না হলে বৈদ্যুতিক শকসহ ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতো। এ রকম নির্যাতনে এক বাংলাদেশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়, যেখানে তার সঙ্গে থাকা জুনায়েদ নামে এক ব্যক্তি পালিয়ে থাইল্যান্ডে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি বাকিদের উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করেন।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মুক্তি
বাংলাদেশি নাগরিকদের মুক্তির জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করে। মিয়ানমার সরকার জানায়, সীমান্তের মায়াওয়াডি-মেসোট অঞ্চল স্পর্শকাতর হওয়ায় বাইরের কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। তবে বাংলাদেশ যদি থাইল্যান্ডের সহায়তা গ্রহণ করে, তাহলে বন্দিদের মুক্ত করা সম্ভব। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দূতাবাস থাইল্যান্ড সরকারের সহযোগিতা চেয়ে সফল হয়। এর ফলে ১৯ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে ব্যাংককে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
বন্দি শিবিরের অবস্থা
মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৩০টি বন্দি শিবির রয়েছে, যেখানে অনেক বিদেশি নাগরিকদের আটকে রাখা হয়। মানবপাচার চক্রের সদস্যরা সাধারণত আইটি পেশাজীবীদের অধিক বেতনের লোভ দেখিয়ে এসব শিবিরে নিয়ে আসে। সেখানে তাদের জোরপূর্বক সাইবার অপরাধে যুক্ত করা হয়, আর কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়।
অন্যান্য দেশের নাগরিকদের উদ্ধার
এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের এসব বন্দি শিবির থেকে চীনের প্রায় ৬০০০, ইন্দোনেশিয়ার ৪০০ এবং ভারতের ২৮৫ জন নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
সরকারের সতর্কবার্তা
বাংলাদেশ সরকার জনগণকে বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং মানবপাচার প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।