Shahadat Babu, Noakhali correspondent
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া নেতিবাচক সংবাদ “পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে শশুর গ্রেপ্তার” আসলে সব সময় যা বাতাসে ছড়ায় আসল ঘটনা কিন্তু তা নয়, বলছে পরিবার।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে পুত্রবধূর পরকীয়ার কথা জেনে গিয়ে ফেঁসে গেলেন শ্বশুর আহসান উল্লাহ (৫৫)। তাকে ষড়যন্ত্রমূলক ধর্ষণের মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পুত্রবধূ রোমানা আক্তার রুবিনার বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন আহসান উল্লাহর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ভুক্তভোগী আহসান উল্লাহ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আলী আহামদের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে আহসান উল্লাহর স্ত্রী হাছিনা আক্তার বলেন, আমার ছেলে প্রবাসে থাকার সুবাদে এক টিকটকারের সঙ্গে পুত্রবধূ রুবিনা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। স্বামী বিদেশ থাকার সুবাদে ওই মেয়ে একেকবার একেক মানুষকে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে। যার নালিশ তার শ্বশুরের কাছে আসতে থাকে, এ ব্যাপারে তার শ্বশুর তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে অপকটে স্বীকার করে বলে, আমি যা ইচ্ছা তা করব আপনার কী সমস্যা? অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আমার ছেলের বউ রুবিনা তার পরকীয়ার কথা স্বীকার করে বলে, আমি পরকীয়া করছি। এতে আপনার কি সমস্যা? আমি বলে দিচ্ছি আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ি করলে আপনাকে জেলের ভাত খেতে হবে।
হাছিনা আক্তার বলেন, একপর্যায়ে আমরা তার এই অপকর্মের কথা আমার প্রবাসী ছেলেকে জানালে ছেলে আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে বলে, যেহেতু তার একটা মেয়ে সন্তান আছে। সন্তানের মায়া মমতায় পড়ে দূর প্রবাস থেকে ছেলেটি তার স্ত্রীকে কড়া ভাষায় কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু চোখের সামনে পুত্রবধূর অপকর্মে বাধা দেওয়ায় আজ আমার স্বামীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করিয়েছে রুবিনা। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনকে অনুরোধ করতে চাই ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা এবং সাজানো ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে সত্যের মুখোশ উন্মোচিত করা হোক। এবং সমাজের ব্যাধি এই পরকীয়া আসক্ত মেয়েটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এর আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংবাদ, পূত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরকে গ্রেপ্তারের পর এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুমুল সমালোচনার ঝড় বয়ে চলে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ঘটনার ভিতরের ঘটনা বেরিয়ে আসতেই জনমনে দেখা দেয় ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। অনেকেই আবার ফেসবুকে পোস্ট করছেন “শশুরকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন পুত্রবধূ”। এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক পোস্ট ও ভিডিওতে দেখা যায়, শ্বশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই গৃহবধূ রুবিনা একজন টিকটকার। টিকটকের সূত্রে স্থানীয় আরেক টিকটকার যুবকের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছে তাদের। একসঙ্গে করা একাধিক টিকটক ভিডিও রয়েছে তাদের। এসব ভিডিওর কোনোটিতে ওই যুবক তাকে ঘড়ি পরিয়ে দিচ্ছেন, কোনোটিতে আপত্তিকর হয়ে একে অপরের হাত ধরে আছেন।
এদিকে এ বিষয়ে গৃহবধু রুবিনার কাছে জানতে চাইলে তিনি শ্বশুরকে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি যার সাথে টিকটক করেছি, সে আমার পাশের বাড়ির মামা। তার সাথে আমার কোনো পরকীয়ার সম্পর্ক নেই। আমাকে অপবাদ দিতেই এমন অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূর স্বামী দুবাই প্রবাসী। তিনি তার এক সন্তান নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করেন। শ্বশুর আহসান উল্লাহ বিভিন্ন সময় পুত্রবধূকে কুরুচিপূর্ণ কথাসহ খারাপ কাজের ইঙ্গিত দেন। ভুক্তভোগী বিষয়টি স্বামী ও শাশুড়িকে জানালেও তারা বিষয়টি কর্ণপাত করেননি। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে ভুক্তভোগী প্রতিদিনের ন্যায় নিজের কক্ষে কন্যা সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সেহেরি খাওয়ার পূর্বে রাত সোয়া ৩ টার দিকে শ্বশুর কৌশলে পুত্রবধূর কক্ষে প্রবেশ করেন। ওই সময় তিনি পুত্রবধূকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগী চিৎকার করতে গেলে শ্বশুর তার মুখ চেপে ধরেন, ধর্ষণ করে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যান। পরে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বিষয়টি তার স্বামী-শাশুড়িকে জানান এবং নিজেই বাদী হয়ে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
অভিযোগ পেয়ে শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়ি থেকে আহসান উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা পরবর্তী শ্বশুর আহসান উল্লাহকে (৫৫) রোববার (১৬ মার্চ) বিকেলে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।