জয়পুরহাট) জেলা প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ভাই বোনের মধ্যে ওয়াকফ জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও তুলশীগঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপি আহ্বায়কসহ ২০ জনকে আসামী করে চাঁদাবাজি, সোনার গহনা ছিনতাই ও হত্যার চেষ্টা শ্লীলতাহানিসহ মামলা করেছেন। উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আনোয়ার পারভেজ রিংকু৷
গত বুধবার ১১ মার্চ তুলসী গঙ্গা ইউনিয়ন মুগইল, গ্রাম আটি মৌজ এলাকায় এঘটনা ঘটে৷
মামলায় উল্লেখযোগ্য নিরীহ আসামিরা হলেন, ওয়ারেছুল মজিদ (৫০),সহ আজিজার ও নজরুল (৫২), আব্দুল মান্নান (৪৭), আব্দুল কাইয়ুম (২২), মুকুল (৩৫), ওমর (২৪), জায়দুল (৩২), ফরিদ (৫৫), মহাতাব (৫৯), সাজু কাজী (৬২), শুকটা (৪২), শাহিন (৫৪), রফিকুল ইসলাম (৫৩), আল আমিন (২৩), সালাম (৫২), আলম (৪০), গিয়াস উদ্দিন (৪৮),আব্দুর মোঃ টামো (৪৭), পিতাঃ শুকুর আলী, সাং-মুগইল, সর্ব থানা: ক্ষেতলাল, জেলা: জপুরহাট৷
সরেজমিনে জানাগেছে, উপজেলার আটি মৌজার হাজী হাড়ী সরদার ওয়াকফ এষ্টেটের মুতাওয়াল্লি ওয়ারেছুল মজিদ ও বোন মজিদা উম্মে আম্মারার সঙ্গে ওয়াকফ জমি জমা সক্রান্ত দির্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলছিল। এনিয়ে আদালত ও থানায় একাধিক মামলা চলমান আছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে বোন মজিদা বর্তমান ইরি মৌসুমে ওই জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিল বোন মজিদা । এঘটনায় গত ৬ মার্চ ফৌজদারি আদালতে ওই মতোয়াল্লী ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করে। আদালত আইন শৃঙ্খোলা বজায় রাখতে ক্ষেতলাল থানাকে আদেশের কপি পৌছে দেয়। অজানা কারনে ক্ষেতলাল থানা পুলিশ বিবাদীকে ১৪৪ ধারার নোটিশ জারী না করায় গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে বোন মজিদা উম্মে আম্মারা লোকজন নিয়ে ধানের চাড়া রোপন করতে যায়। ওই সময়
মুতাওয়াল্লি ওয়ারেছুল মজিদ জমি রোপন করতে নিষেধ করলে বোন আম্মারা লোকজন উঠিয়ে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ক্ষেতলাল থানার দুইজন এসআাই আজিজুল ও ফারুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা উভয় পক্ষকে ডেকে ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করে এবং বলে বিরোধপূর্ণ এই জমিতে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। এসময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও দৈনিক যুগান্তর এবং দৈনিক পাঞ্জেরী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ওই ঘটনার সম্পূর্ণ ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। ওই সময় এঘটনায় ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনোয়ার পারভেজ রিংকু ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও চাঁদাবাজি, সোনার গহনা ছিনতাই ও হত্যা চেষ্টা ক্ষেতলাল থানায় একটি মামলা করেছেন। এজাহারে উল্লেখ করা লোহার রড, বাঁশের লাঠি, সোনার গহনা চুরি ও চাঁদা দাবি এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তিনি, ওই দিনের ঘটনার সমস্ত ভিডিও পাঞ্জেরীর হাতে রয়েছে।
এবিষয়ে মুতাওয়াল্লি ওয়ারেছুল মজিদ বলেন, ওয়াকফ এস্টেটের জমি আমার বড় বোন মালিকানা দাবি করে একাধিকবার দখলের চেষ্টা করছিল। এনিয়ে আমি আদালতে গিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করি। ওই আদেশ জারি করতে প্রথমে ক্ষেতলাল থানার এসআই সঞ্জয় আমার সঙ্গে চুক্তি স্বরূপ মোটা অংকের টাকা দাবি করে আমাকে কত দিবেন, এসআই রাকিবকে কত দিবেন। তাদের সথে সমঝোতা না করাই। তারা আমার বোনকে উস্কে দিয়ে নিরীহ মানুষ গুলির উপরে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
তিনি আরও বলেন, ইতি পৃর্বে সাবেক পুলিশ সুপার এসপি নূরে আলম সৈরাচারের দোসর আইনের থেকে এসপি বড় পাওয়ার অফ এটার্নি ক্ষমতা আমার বোনকে দিয়ে এখনে দুজন পুলিশকে ব্যক্তিগত ভাবে নিয়োগ করেছিলো ওই সময় ছাত্রলীগ যুবলীগ নিষিদ্ধ লীগ এসপি লীগ বহর নিয়ে এসে৷ ক্ষমতার অপব্যবহার করত৷ ওয়কফ সম্পত্তি নিয়ে মামলা অবশ্যই আমরা, আদালতের আদেশকে ফলো করব৷ কিন্তু পুলিশ সেটিকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কখনো ডিআইজি কখনো এসপির আদেশ, তালকে তিল বানিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বিগত দিনেও বর্তমানে সেই সুযোগ্য তারা এখনো নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এই অপশক্তি৷
ওয়াকফ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ২ বগুড়া জয়পুরহাট জানান, ওয়াকফ স্টেটের জমি কোন মুতাওয়াল্লি নামে ভুল ক্রমে রেকট হয়ে যায়, তার অবর্তমানে সেই জমি রেকট মূলে উত্তরআাধিকার সূত্রে বিক্র হয়ে থাকলে বর্তমান মুতাওয়াল্লি
সেই রেকট সংসধনি মামলায় সংসধনি ও রায় ডিগ্রী আদেশ হলে আদালত মূলে ওই নালিশি সম্পত্তি ওয়াকফ স্টেটেই অধিনস্ত্য হবে৷
ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি এবং হস্তান্তরের বিধান অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন এ সংক্রান্ত বিশেষ ধারা এবং আইনের বিধান।
কিন্তু এই রায়কে বুড়োআঙুল দেখিয়ে চলছে বিক্রি, হস্তান্তর, জবরদখল এবং ভোগ-দখল। ওয়াকফকৃত সম্পত্তি আত্মসাত, বিক্রি, জবরদখলের অভিযোগে নিতান্তই উল্লেখযোগ্য। ফলে দুদকের ‘ব্যবস্থা গ্রহণ’ এবং হাইকোর্টের রায় কোনোটিরই কার্যকর প্রতিফলন নেই। অব্যাহত রয়েছে ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি ও আত্মসাৎ। ওয়াকফ এস্টেটের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, ধূর্ত সমাজপতি পরস্পর যোগসাজশে নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা মূল্যের ওয়াকফ সম্পত্তি।
বিচারপতি তারিক উল হাকিম এবং বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায় দেন।
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে হাইকোর্টের রায় ছিল যুগান্তকারী।এড্যভোকেট রাইহান আলী বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা:) তাঁর জীবদ্দশায় ওয়াকফের বিধান চালু করেন। এটি কোরান নির্দেশিত পন্থা। যার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি রয়েছে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওয়াকফে তার সম্পত্তির কিছু অংশ দান করে থাকেন। ওয়াকফ সম্পত্তির আয় থেকে ৩টি উদ্দেশ্যে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। ধর্মীয়, দাতব্য ও মানবহিতৈষী কাজে। অন্য কোনো কাজে এ সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়।
ওয়াকফ নিয়ম ইসলামী আইনে মাওলানা মোঃ রুহুল আমিন বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূল সম্পত্তিটি এভাবে সদকা (ওয়াকফ) করে যে, তা বিক্রি করা যাবে না, কাউকে দান করা যাবে না। ওয়াকফের সম্পত্তি বিক্রি করা, এওয়াজ-বদল করা জায়েজ নয়। বিশেষত ওয়াকফকারী যদি বিক্রি না করার কথা উল্লেখ করেন তখন তা বিক্রি করার কোনো সুযোগ থাকে না৷
হিবা বা দানও করবেন না এবং উত্তরাধিকারীদেরও দেবেন না; বরং তা থেকে ফকির, নিকটাত্মীয়, গোলাম, মিসকিন এবং মুসাফিররা আল্লাহর ওয়াস্তে উপকৃত হতে থাকবে।
জমি নিয়ে বিরোধ বা পূর্বশত্রুকে শায়েস্তা করতে বাদী ভাড়া করা হয় জিআর মামলার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশি ঘটছে পুলিশ সঠিক তদন্ত করলে এমন ঘটনা কমে আসবে বলে, দাবি করে সচেতন মহল৷
জান্তে চাইলে ক্ষেতলাল থানার এসআই সঞ্জয় সব অভিয়োগ অস্বীকার করে বলেন, কে কি বলে বলুক আমি তো আর টাকা নেইনি।
সম্প্রতি দুটি ঘটনার প্রকৃত ভুক্তভোগীরা থানার দারস্ত হলে নেওয়া হয় নি, কোন ব্যবস্থা৷ ভুক্তভোগী আব্দুল হামিদ নামের জৈনক ব্যক্তির মাথায় পাঁচটি সেলাই সে মামলাটি থানায় নেওয়া হয়নি৷ ভুক্তভোগী ফিতা মিয়া নামের একজন ব্যক্তির বাম হাত ভেঙে দিয়ে মাথায় লাঠির আঘাতে তিনটি সেলাই থানার দ্বারস্থ হলে মামলা নেওয়া হয়নি সম্প্রীতি এই ঘটনাগুলোর৷
মামলারবাদি আনোয়ার পারভেজ রিংকু ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও মামলার বাদি হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন হ্যাঁ আমি বাদি হয়েছি। ওই দিন কি ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কিছুই জানিনা। বলে ফোন কেটে দেয়।
এ বিষয়ে ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহবুবর রহমান সরকার। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে, রিসিভ না হওয়াই এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।