সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হকের শত কোটি টাকার সম্পদের দলিলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার এক আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে এসব নথি জব্দ করা হয়।
বিদেশে বিলাসবহুল সম্পদের খোঁজ

দুদক সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধারকৃত নথির মধ্যে রয়েছে জার্মানির বন শহরের একটি বিলাসবহুল বাড়ির দলিল এবং কানাডার টরন্টোর আরও একটি বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য কয়েকশ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নথি গোপনের চেষ্টা ও দুদকের অভিযান
দুদকের কর্মকর্তাদের দাবি, শহীদুল হক তার সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরের সি-ব্লকের একটি বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে শহীদুল হকের ছোট বোনের ননদ নীগার সুলতানার বাসা থেকে দুটি বস্তাভর্তি নথি জব্দ করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, উদ্ধারকৃত নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
✅ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পত্তির দলিল
✅ গোপনীয় চুক্তিপত্র
✅ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি
✅ ব্যাংক হিসাব বিবরণী
✅ এফডিআর ও বিভিন্ন বন্ডের কাগজপত্র
শত কোটি টাকার এফডিআর ও ব্যাংক হিসাব
দুদক সূত্র জানিয়েছে, শহীদুল হকের বাবা ও মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন’-এর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) পাওয়া গেছে। উদ্ধারকৃত নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—
🔹 ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা
🔹 ফারমার্স ব্যাংক: ৮টি হিসাবে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা
🔹 মার্কেন্টাইল ব্যাংক: ৪টি হিসাবে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা
🔹 মোট এফডিআর: ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা
এছাড়া, ফাউন্ডেশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে অর্ধশতাধিক সঞ্চয়ী হিসাব ও এফডিআরের নথিপত্র পেয়েছে দুদক।
দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির দলিল
উদ্ধারকৃত দলিল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শহীদুল হকের নামে রাজধানী ঢাকার গুলশান, উত্তরা, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, ফতুল্লা, সোনারগাঁ, কেরানীগঞ্জ, পূর্বাচল ও গাজীপুরে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে।
ঢাকার গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৭টি দলিল, সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৫টি, উত্তরায় ২টি, কেরানীগঞ্জে ২টি, মোহাম্মদপুরে ২টি এবং নারায়ণগঞ্জে ১০টি দলিলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি
গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার উত্তরা থেকে শহীদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়।
দুদক, এনবিআর এবং গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত তদন্তে এই বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন জানিয়েছে, তারা শহীদুল হকের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে আরও গভীর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
সাবেক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসায় জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলো তার দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে।
দেশজুড়ে আলোচিত এই দুর্নীতির তদন্ত কীভাবে এগোয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।