আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে নিবন্ধনে আগ্রহী দলগুলোর কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইসি। সোমবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিবন্ধনের প্রক্রিয়া:
নির্বাচন কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ক এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এর শর্তাবলি পূরণে সক্ষম রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে হবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী দলগুলোর নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
- দলের গঠনতন্ত্র
- দলের নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে)
- দলের বিধিমালা (যদি থাকে)
- দলের লোগো ও পতাকার ছবি
- দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যের নাম ও পদবিসহ তালিকা
- দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও সর্বশেষ স্থিতি
- দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ
- নিবন্ধন আবেদনের জন্য ক্ষমতাপত্র
- নিবন্ধন ফি বাবদ ৫,০০০ টাকার ট্রেজারি চালানের কপি
নিবন্ধনের শর্ত:
নিবন্ধনের জন্য দলগুলোর নিম্নলিখিত শর্তাবলির যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে:
- বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন জয়
- কোনো সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণকৃত নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটের ৫% ভোট লাভ
- দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর থাকা। এছাড়া প্রতি উপজেলায় বা থানায় অন্তত ২০০ জন ভোটার সদস্য থাকতে হবে।
২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধিমালা প্রণয়ন করে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৪টি দল নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বা আদালতের আদেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বর্তমানে ইসির নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া শেষ হলে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে জুলাই আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।
যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম সরকারের মামলা:
এদিকে, টঙ্গীতে আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি হত্যাকাণ্ডের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারের খালাস চেয়ে হাইকোর্টের আপিল বিভাগে করা আবেদনের শুনানি শুরু হচ্ছে আজ। তার ছেলে সরকার শাহনূর ইসলাম জানিয়েছেন, ১১ মার্চ মঙ্গলবার আপিল বিভাগে মামলার শুনানি শুরু হবে।
নির্বাচন কমিশনের এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে নির্বাচনকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সহায়তা করবে। তবে নিবন্ধনের শর্তাবলি পূরণ এবং দলগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।