নেত্রকোণা প্রতিনিধি ,নুরুল হক রুনু:
গত এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন ইাজারাকৃত জলমহালের মাছ লুটপাট করার মহোৎসব চালিয়েছে বিভিন্ন এলাকার মাছ শিকারীরা।
প্রতিদিনিই ময়মনসিংহের নান্দাইল, গৌরিপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, নেত্রকোণা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার হাজার হাজার মাছ শিকারীরা সমাবেত হয়ে হাওরে ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করছে। গত এক সপ্তাহে মদন উপজেলার নূরেশ্বর বিল, খালিয়াজুরী উপজেলার কির্তনকলা বিল, কারি বিল, উচাবাইদা বিল, হাইলা বিলসহ বেশ কয়েকটি ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করেছে মাছ শিকারীরা।
প্রশাসনের লোকজনের বাধা উপেক্ষা করেই প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে। যেসব বিলের মাছ লুট হয়েছে সেগুলোর ইজারা মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। গত শনিবার সকালে খালিয়াজুরী উপজেলার ইজারাকৃত কাঠালজান ও মরাগাঙ্গের মাছ লুট করার জন্য ধনু নদীর পাড়ে জমায়েত হয় হাজারো মাছ শিকারী। পরে মাছ শিকারীরা রসূলপুর ফেরিঘাটের পাশে তাদের পরিবহণের শতাধিক পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, হেনট্রলি, মোটরসাইকেল রেখে ধনু নদী পার হওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় ফেরিঘাটের লোকজনের সঙ্গে মাছ শিকারীদের তর্কবির্তকের এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে স্থানীয় রসুলপুর গ্রামের লোকজন অংশ নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উভয়পক্ষের প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা মাছ শিকারীদের পরিবহণের শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় মদন উপজেলার মাছ শিকারী রোকন মিয়া ও অটো চালক ইয়াছিন মিয়া সহ আরও কয়েক জন নদীতে নিখোঁজ হয় বলে জানা যায়। রোববার রাত পর্যন্তও তাদেও খোঁজ মিলেনি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকালে হাওরপাড়ের মদন উপজেলার গৌবিন্দশ্রী ও খালিয়াজুরীর জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিলে হাওরপাড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খালিয়াজুরি থানার ওসি মকবুল হোসেন জানান, গত শনিবারের ঘটনায় নিয়ন্ত্রণের জন্য হাওর থেকে ৪০ জন কে আটক করা হয়ে ছিল।
মদন উপজেলার একাংশ ও খালিয়াজুরীর একাংশের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি নজরে নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে মদন ও খালিয়াজুরি উপজেলার বিএনপির নেতৃবৃন্দ রবিবার ঘটনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে।আলোচনার সিন্ধান্ত মোতাবেক দুই উপজেলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্য দলীয় নেতাকর্মীদের জিম্মায় আটককৃতদের পুলিশ হেফাজত থেকে ছেড়ে দেয়ার সিন্ধান্ত হয়। তবে অন্য উপজেলার যারা আটক হয়েছেন তাদেও ব্যাপাওে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে পরবর্তী সিন্ধান্ত নওয়া হবে বলে জানা ওসি।
নিখোঁজ ব্যাপারে তিনি জানান সঠিক কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে সোমবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
নিখোঁজ হওয়া রোকন মিয়ার বাড়ী তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের ও ইয়াছিন মিয়ার বাড়ি কাইটাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের। নিখোঁজ ইয়াছিন মিয়ার মা সুলতানা আক্তার জানান, আমার ছেলে মাছ ধরতে যায়নি। মাছ ধরার লোকজনকে নিয়ে গিয়েছিল। আজ ৩ দিন হলো এখনও বাড়ি ফিরেনি তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
মদন থানা ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, দুই জন নিখোঁজ রয়েছে এমন খবর লোক মুখে শুনেছি।সোমবার দুপুরে খালিয়াজুরির ধনু নদী থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ৩টি মরাদেহ উদ্ধার করেছে। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে নদী থেকে উদ্ধারকৃত মরদেহ গুলি হলো মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের রোকন মিয়া, কেন্দুয়া উপজেলার রয়েলবাড়ি গ্রামের হৃদয় মিয়া ও আটপাড়া উপজেলার রূপচন্দ্রপুরের শহীদ মিয়া।