ভারতে অনস্থানরত এক মাড়োয়াড়ির সম্পত্তি দখল নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ মিলেছে বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। তারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। ব্যবসায়ীর বিচারের দাবীতে বিএনপি নেতা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (৯ মার্চ) বিকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে।
বিএনপি নেতা অমিত কুমার আগারওয়ালার ভাষ্য, শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে বর্তমান ইসলামী ব্যাংকের বিপরীত পার্শে মাড়োয়ারী পরিবার সুশীল কুমার আগারওয়ালার ৩০ শতক জমি রয়েছে। এখানে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই তাদের আবাসিক বসতঘর এবং ব্যবসায়ীক গদিঘর ও গুদামঘর অবস্থিত। দীর্ঘদিন থেকেই আবাসিক ভবনে তাদের বসবাস।
আর টিনসেড গুদামঘর ভাড়া দেয়া। যা কয়েক বছর থেকে বিউটি সাইকেল স্টোরের মালিক আলতাফ হোসেন তার মালামাল রাখার জন্য ভাড়া নিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন হলো আলতাফ হোসেন ভাড়া দেয়া বন্ধ করে ওই গুদামঘরসহ আবাসভবনও তার কেনা সম্পত্তি বলে দাবী করছেন।
এর প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি আলতাফ হোসেন ও তার ছেলেরা ভাড়াটে গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে সুমিত কুমার ও অমিত কুমার পরিবারকে ওই বসতঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে। এনিয়ে শালিসে আলতাফ হোসেন জানান, সুশীল কুমার আগারওয়ালার ভাই প্রদীপ কুমার আগারওয়ালার কাছ থেকে ওই সম্পত্তি তিনি কিনে নিয়েছেন।
এর প্রেক্ষিতে সুমিত কুমার আগারওয়ালার বক্তব্য আলতাফ হোসেন যে দলিল দেখাচ্ছেন তা ভূয়া। কেননা তার কাকা প্রদীপ কুমার আগারওয়ালা দেশ স্বাধীনের পরই ভারতে চলে গেছেন এবং তিনি এখন সেদেশের নাগরিক। তিনি আর কখনো দেশে বা সৈয়দপুরে আসেননি। তাহলে তিনি কিভাবে ভারতে থেকে তার সৈয়দপুরের সম্পত্তি বিক্রি করলেন?
এই সূত্র ধরে সুমিত কুমার আগারওয়ালার পরিবারকে তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার দাবী উঠে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সূশীলদের পক্ষ থেকে। কিন্তু আলতাফ হোসেন তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে আওয়ামীলীগ নেতাদের দাপটে দীর্ঘদিন থেকে সম্পত্তিটি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এনিয়ে আবার চাপ দিলে আলতাফ হোসেন কৌশলে সময় ক্ষেপণ করে চলেছে।
এর প্রেক্ষিতে আজ সুমিত কুমার পরিবার শতাধিক হিন্দু লোকজনকে নিয়ে দখলবাজ আলতাফ হোসেন গংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলটি শহীদ তুলশীরাম সড়ক থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় মিছিলকারীরা ‘আলতাফের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, ভূমিদস্যু আলতাফের বিচার চাই করতে হবে’ শ্লোগান দেয়। এতে শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এব্যাপারে ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ওই সম্পত্তি আমি কিনিনি। আমি সেখানে গত জানুয়ারী মাস থেকে ভাড়া নিয়ে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছি মাত্র। প্রদীপ কুমার আগারওয়ালার পাওয়ার অব এটর্নি মুলে এ্যাডভোকেট হিল্লোল কুমার রায় এটি আমাকে ভাড়া দিয়েছেন। সুমিত কুমার অহেতুক সম্পত্তি দখল বা বিক্রির প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।
মূলত ওই সম্পত্তি প্রদীপ কুমার আগারওয়ালা ও তার ভাই সজন কুমার আগারওয়ালার। সেখানে সুমিত কুমার পরিবারের কোন অংশই নাই। তারপরও সুমিত বিএনপি নেতা পরিচয়ে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ওই সম্পত্তি দখল করার পায়তারা করছে। সেদিন তারা সদলবলে সেখানে উপস্থিত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় আমার ভাড়ায় নেয়া গুদাম জবরদখলের অপচেষ্টা করে। এতে গুদামের মালামাল রক্ষার্থে আমরা তাদের প্রতিহত করেছি মাত্র।
তিনি বলেন, সম্পত্তি নিয়ে যদি তাদের কোন দাবি থাকে তা জমির মালিক প্রদীপ কুমার আগারওয়ালার সাথে বুঝে নিবে। আমি ভাড়াটিয়া, আমার সাথে বিরোধের কোন কারন নাই। তবুও কেন তিনি আইনগতভাবে নিয়ম অনুযায়ী কাজ না করে গায়ের জোরে আমাকে বৈধ ভাড়া নেয়া গুদাম থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছেন বুঝতে পারছিনা।
আলতাফ হোসেন বলেন, প্রদীপ কুমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য কলকাতায় অবস্থান করছেন। তার অবর্তমানে তার আইনজীবী হিল্লোল কুমার রায়ের সাথে এবিষয়ে বসলেই সমাধান সম্ভব। কিন্তু সুমিত কুমার আগারওয়ালা তা না করে বাঁকা পথ অবলম্বন করছেন। আমি এব্যাপারে তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিবো। আমি একজন সম্মানিত নাগরিক ও ব্যবসায়ী। মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়ে আমার মানহানির বিচার চাই। (ছবি আছে)