ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত তানযীমুল উম্মাহ মাদ্রাসায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় ৯ বছর বয়সী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জামজাম ইসলাম রিতুল চারজন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে দুই ঘণ্টা ধরে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। এই ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছে এবং কোনো ধরনের জবাবদিহি করেনি।
রিতুলের পরিবারের বর্ণনা অনুযায়ী, হামলাকারীরা রিতুলের কাছ থেকে ২,০০০ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে একটি কক্ষে আটকে ফেলে এবং স্টিলের স্কেল ও প্লাস্টিকের ঝাড়ু দিয়ে মারধর করে। রিতুল চিৎকার করে সাহায্য চাইলে এবং সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিক্ষককে ডাকলেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসেনি। নির্যাতনকারীরা তাকে পিটিয়ে গোসল করিয়ে আঘাতের চিহ্ন লুকানোর চেষ্টা করে এবং পরে তাকে তার রুমে পাঠিয়ে দেয়। এ সময় তারা তাকে হুমকি দেয় যেন সে কারও কাছে কিছু না বলে।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলা

পরদিন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে রিতুলকে জোর করে রোজা ভাঙতে বাধ্য করে এবং খালি পেটে একটি ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তাকে রেখে দেওয়া হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে এক শিক্ষকের ফোন থেকে তার পরিবারকে কল করতে বাধ্য করে, যাতে সে বলে যে আসন্ন প্রতিযোগিতার কারণে শুক্রবার বাসায় যেতে পারবে না।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
রিতুলের পরিবার শুরুতে বিষয়টি সন্দেহ করেনি। তবে রিতুল কৌশলে তার ভাইয়ের ফোন নম্বর এক সহপাঠীকে দেয়, যে পরে এক শিক্ষকের ফোন ধার নিয়ে রাত ৯:৩০ টায় রিতুলের ভাইকে কল করে মাদ্রাসায় আসতে বলে। রিতুলের ভাই দ্রুত মাদ্রাসায় গিয়ে দেখে যে সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এবং নড়াচড়া করতে পারছে না। এরপর পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা
এই ২৫ ঘণ্টার মধ্যে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ একবারও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা সম্পূর্ণ উদাসীনতা দেখিয়েছে শিক্ষার্থীদের কল্যাণের বিষয়ে। যখন পরিবারের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হয়, তখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চেয়ারম্যান ফোনে বিষয়টি উড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাকি বলেছেন যে তিনি তার ছেলেকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তাই আসতে পারেননি। আর চেয়ারম্যান জানান যে তিনি হজে যাচ্ছেন, তাই এতে জড়িত হবেন না। তারা আরও যুক্তি দেন যে, “আমাদের দেশজুড়ে ১০৫টি শাখা রয়েছে—একটি বন্ধ হলে কোনো সমস্যা নেই।”
পরিবারের দাবি

ভুক্তভোগীর পরিবার মাদ্রাসার অবহেলা, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা এবং সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা এখন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে, যেহেতু তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অনেকেই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার তীব্র নিন্দা করেছেন।
Last words
মিরপুরের তানযীমুল উম্মাহ মাদ্রাসায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি তুলে ধরেছে। আশা করা যায়, এই ঘটনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন হবে এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ভুক্তভোগী পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়া এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।