ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট থানার পুলিশ র্যাব পরিচয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ৮ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের লক্ষ্য করে তাদের পথ রোধ করে, র্যাব বা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিত। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, র্যাবের জ্যাকেট, হাতকড়া, হকিস্টিক, বেতের লাঠি, নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রী।
গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যরা:
- মো. আল আমিন হাওলাদার (৪০)
- মো. ওমর ফারুক (৩৪)
- মো. ফারুক বেপারী (৩৯)
- মো. শহিদুল ইসলাম শেখ (৪১)
- মো. মানিক (২৭)
- জহিরুল ইসলাম জহির (৪৮)
- আল-আমিন আহম্মেদ (৪০)
- মো. বারেক (৪৪)
এই ডাকাত দলের সদস্যরা কৌশলে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের অনুসরণ করতো এবং তাদের পথ রোধ করে নিজেদের র্যাব বা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিতো। তারা ভিকটিমদের ভয় দেখিয়ে মালামাল ছিনতাই করতো এবং পরে শারীরিক নির্যাতনও চালাত। এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ১২-১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ঘটনার বিস্তারিত:
১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ফারুক মিয়া নামে এক যাত্রী ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় কালো রঙের একটি গাড়ি তার পথ রোধ করে, গাড়ি থেকে ৫-৬ জন ব্যক্তি র্যাবের পোশাক পরে বেরিয়ে এসে তাকে গাড়ি থেকে জোর করে নামিয়ে নিয়ে যায়। পরে তারা তার সঙ্গে থাকা ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে। রাতের শেষের দিকে তাকে হাতিরঝিল এলাকায় ফেলে রেখে চলে যায় ডাকাতরা। এই ঘটনার পর ফারুক মিয়া নিউমার্কেট থানায় অভিযোগ করেন, এবং ডিএমপি তদন্ত শুরু করে।
গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া:
পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তির সাহায্যে তদন্তে নেমে ২৩ ফেব্রুয়ারি নিউমার্কেট এলাকা থেকে ডাকাত দলের প্রথম সদস্য মানিককে গ্রেপ্তার করে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায় অভিযান চালিয়ে আল আমিন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২ মার্চ রামপুরা থানার সহায়তায় ফারুক বেপারী ও শহিদুল ইসলাম শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৭ মার্চ বংশাল থানা পুলিশের সহায়তায় আরও তিনজন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিল। তারা হলেন: জহিরুল ইসলাম জহির, আল-আমিন আহম্মেদ এবং মো. বারেক।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা:
ডাকাতির সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মোট ৪০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ এবং অস্ত্র আইনে মামলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে এবং তদন্তের মাধ্যমে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
অপরাধী দল সম্পর্কে আরও তথ্য:
পুলিশ জানিয়েছে, এই ডাকাত চক্রটি দীর্ঘ সময় ধরে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। তারা মূলত বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের টার্গেট করতো, যাদের কাছে মূল্যবান জিনিসপত্র থাকতে পারে, যেমন সোনালী অলংকার, মোবাইল ফোন, দামি ল্যাপটপ এবং অন্যান্য মালামাল। তারা যাত্রীদের আক্রমণ করে তাদের গাড়ির পথে বাধা সৃষ্টি করতো, এবং ভিকটিমদের শারীরিক নির্যাতন করে মালামাল ছিনতাই করে নিত।
এছাড়া, তারা নিজেদের র্যাব বা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপরাধ করতো, যাতে তাদের ভয় দেখানো যায় এবং ভিকটিমরা সহজেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে।
পুলিশের সতর্কতা:
ডিএমপির পুলিশ কর্মকর্তারা জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন, যদি তারা এমন ধরনের অপরাধের শিকার হন, তাহলে তৎক্ষণাত পুলিশে রিপোর্ট করতে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি এই ধরনের অপরাধপ্রবণতাকে প্রতিরোধে তারা একযোগে কাজ করবে।
আগ্নেয় দৃষ্টি:
এখনও এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে এবং তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।