Shawn Bepari
Shariatpur Correspondent,
শরীয়তপুরের জাজিরায় মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির শিকার এক নারী অভিযোগ করতে গেলে উল্টো আসামী করে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে থানার ওসির বিরুদ্ধে।
বুধবার (০৫ মার্চ) সকালে জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের হাজী সলিমউদ্দিন মাদবর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ফকিরের স্ত্রী লতা বেগমের(২৮) সাথে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী লতা বেগমের স্বামী আব্দুল ফকিরের সাথে জমিজমা নিয়ে তার বড়ভাই কাদির ফকিরের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার সন্ধায় কাদির ফকির ও আব্দুল ফকিরের পরিবারের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ৪ জন আহত হয়। পরে আহতরা সকলে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এরপর মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগী নারী লতা বেগম নিজের প্রয়োজনে হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে আসলে মধ্যরাতে তার উপর আবারও আব্দুল ফকিরের পরিবারের লোকজন তাকে তার নিজ ঘরে বেধে আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের কায়দায় ঐ নারীকে বেদম মারধর ও শ্লীলতাহানি করে। রাতেই খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঐ নারীকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশের সাথেই তিনি অভিযোগ করতে থানায় যান। কিন্তু ঐ নারীর উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঐ নারীকে থানার একটি আলাদা রুমে আটকে রাখা হয়। নাখ মুখ ও শরীরে আঘাতের কথা জানালেও তাকে আর চিকিৎসা নিতে দেয়নি ওসি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা বুধবার সকালে পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানায় গিয়ে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা নকিব আকরাম হোসেন তাতে অস্বীকৃতি জানায় এবং গণমাধ্যমকর্মীদের এই ঘটনার বিষয়ে সব ধরণের তথ্য প্রদান হতেও বিরত থাকেন।
পরে প্রথমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব ও পরবর্তিতে জেলা পুলিশ সুপার মো: নজরুল ইসলামকে বিষয়টি অবগত করলেও ওসি আকরাম হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলতে দেননি। সেসময় ঐ নারীর সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে দেখা করতে না দেয়ার কারন জানতে চাইলে ওসি আকরাম হোসেন একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে বাকবিতণ্ডায়ও জড়ান।
অনেক চেষ্টা আর অনুরোধ করে দুপুরের পরে কিছু সময়ের জন্য ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। সেসময়ও ওসি আকরাম হোসেন সেই রুমে এসে ঐ নারীকে থামিয়ে দেয় আর গণমাধ্যমকর্মীদের বের হয়ে যেতে বলে। এতে ভয় পেয়ে ভুক্তভোগী নারী তার পুরো বক্তব্য দিতে পারেননি। তবে ঐ নারী জানিয়েছেন আমি ঘটনার বিষয়ে যেভাবে বলছি সেভাবে অভিযোগে লেখেনি এবং তিনি যেন সত্যিটা না বলে, সত্যি বললে তার ভাই ও পরিবারের লোকজনদের মারধর করবে তাকে এই ধরনের হুমকি পুলিশের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে। এরপরে বেলা ২ টার দিকে ওসি আকরাম হোসেন জানান ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি একজন আসামী হিসেবে থানা হেফাজতে রয়েছেন।
লতা বেগমের কাছে থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বের হয়ে আসতে দেখেই ঐ নারীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ওসি সাহেব টাকা খেয়ে নির্যাতনের শিকার নারীর পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো ঐ নারীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন।
মামলার বিষয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকার্তা(ওসি) নকিব আকরাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তখনও গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে যান এবং মামলা সংক্রান্ত তথ্য প্রদানে গড়িমসি শুরু করেন। নির্যাতনের শিকার নারীকে কেন থানায় এনে উল্টো মামলার আসামী করা হলো জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বার বার বলতে থাকেন আপনাদের কাজ আপনারা করেন আমার কাজ আমি করবো। পরে বেলা ৩ টার সময় ঐ নারীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো: নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়েছি, সেখানে আসলে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। দুপক্ষই থানায় অভিযোগ করেছে তাই দুপক্ষের মামলা রুজু করা হয়েছে।” থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।