মিসরের রাজধানী কায়রোতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আরব শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গাজা দখল’ এবং দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাবের একটি বিকল্প পরিক্ল্পনা দিয়েছে মিসর। ৫৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এ পুনর্গঠন পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছে আরব দেশগুলো।
পরিকল্পনায় তিনটি প্রধান ধাপ রয়েছে- অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা, পুনর্গঠন ও গাজা পরিচালনা। প্রথম ধাপটি প্রায় ছয় মাস স্থায়ী হবে এবং পরবর্তী দুটি ধাপ চার থেকে পাঁচ বছর ধরে চলবে। এর লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে পুনর্গঠন করা, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গাজা উপত্যকার উত্তর-দক্ষিণে প্রধান মহাসড়ক সালাহ আল-দিন থেকে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজন হবে। এ কমিটিটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।
রাস্তাঘাট থেকে ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে পরিষ্কার করার পর ১.২ মিলিয়ন মানুষের থাকার জন্য দুই লাখ অস্থায়ী আবাসন ইউনিট তৈরি করা হবে এবং প্রায় ৬০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পুনরুদ্ধার করা হবে।
নীলনকশা অনুসারে, অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা সম্পন্ন হওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠনের জন্য আরো চার থেকে পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন। এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে চার লাখ স্থায়ী বাড়ি নির্মাণ করার পাশাপাশি গাজার সমুদ্রবন্দর ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ করা হবে। ধীরে ধীরে জল, বর্জ্যব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা ও বিদ্যুতের মতো মৌলিক ব্যবস্থাগুলোও পুনরুদ্ধার করা হবে।
এই পরিকল্পনায় গাজা পরিচালনার জন্য ‘স্বাধীন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের’ একটি দল গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। দলটি হামাসের স্থলাভিষিক্ত হবে। ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার মানবিক সাহায্য তদারকির দায়িত্বে থাকবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গাজা পরিচালনার পথ প্রশস্ত করবে।
গাজার পুনর্গঠনের জন্য ৫৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিল প্রয়োজন বলে জানিয়েছে মিসর। এই অর্থ তিনটি পর্যায়ে বিতরণ করা হবে। প্রথম ছয় মাসে সালাহ আল-দিন সড়ক থেকে ধ্বংসস্তূপ অপসারণ, অস্থায়ী আবাসন নির্মাণ এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো পুনরুদ্ধার করতে তিন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই বছর সময় লাগবে এবং ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এই পর্যায়ে ধ্বংসস্তূপ অপসারণের কাজও অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন এবং আরো আবাসন ইউনিট নির্মাণ করা হবে।
তৃতীয় ধাপে ৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এতে সময় লাগবে আড়াই বছর। এর মধ্যে থাকবে গাজাবাসীদের জন্য আবাসন নির্মাণ, প্রথম পর্যায়ে একটি শিল্প অঞ্চল স্থাপন, মৎস্য ও বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণ এবং একটি বিমানবন্দর নির্মাণসহ অন্যান্য পরিষেবা। পরিকল্পনা অনুসারে, এই অর্থ জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিদেশী ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে।