একদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ শেষ, অন্যদিকে রমজানের প্রথম দিনই গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। রোববার সকাল থেকে মানবিক ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি। এ অবস্থায় হাজারো ফিলিস্তিনি রমজান মাসে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে। ইসরাইল শুধু ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, হামাসের ওপর নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের জন্যও চাপ দিচ্ছে। বলা হয়েছে, হামাস যদি এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে না নেয়, তবে তাদের ‘আরো পরিণতি’ভোগ করতে হবে।
ইসরাইলের এমন পদক্ষেপের পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। মিসর, কাতার ও জর্ডান একে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি’ এবং ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের’ স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছে। এদিকে, মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ‘অনাহারকে’ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে।
কয়েক মাস ধরে ক্রমবর্ধমান ক্ষুধার পর যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে মানবিক সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় গাজায়। রোববার প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ ব্যবহৃত করছে বলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে হামাস। একই সঙ্গে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করার ইসরাইলের সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধাপরাধ এবং জানুয়ারিতে এক বছরের আলোচনার পরে অনুষ্ঠিত যুদ্ধবিরতির উপর একটি স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করে হামাস।
দ্বিতীয় ধাপে, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে হামাস কয়েক ডজন অবশিষ্ট জিম্মিকে মুক্তি দেবে। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এক মাস আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন আরব দেশ ও জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ত্রাণ সহায়তা বন্ধের কারণ হিসেবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস এসব ত্রাণ লুট করে তা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীকে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করছে। তবে ইসরাইলের এই অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছে হামাস। হামাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসরাইলের এই অবরোধ ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে হামাস এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মধ্যে চলা ১৫ মাসের লড়াই বন্ধ করেছে। মুক্তি পেয়েছে প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দি এবং আটক ৩৩ জন ইসরাইলি জিম্মি।
এদিকে, রোববার ইসরাইলকে অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা চালুর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহাসচিব সব পক্ষকে গাজায় পুনরায় যুদ্ধবিরতি রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা ফিরিয়ে আনার এবং সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।