এ কে ফজলুল হক: শের-ই-বাংলার গল্প
এ কে ফজলুল হক, যিনি পরবর্তীতে “শের-ই-বাংলা” হিসেবে পরিচিত হন, ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। তার জীবন এবং কর্ম তাঁকে ইতিহাসের এক অসামান্য অধ্যায়ে স্থাপন করেছে। তিনি ছিলেন এক অদ্বিতীয় বাগ্মী, যার কথা এবং ভাষণগুলো ছিল সবার হৃদয়ে দাগ কেটে যাওয়া। তার দৈহিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং বক্তৃতার মন্ত্রমুগ্ধ করার ক্ষমতা তাঁকে বিশেষভাবে পরিচিতি এনে দেয়। তার জীবনের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং কর্মের দিকে আলোকপাত করলে তাকে সঠিকভাবে বুঝতে সহজ হয়।
শের-ই-বাংলা উপাধি:

এ কে ফজলুল হকের নামের আগে ‘শের-ই-বাংলা’ উপাধি কীভাবে যুক্ত হয়েছে, তা একটি আকর্ষণীয় কাহিনী। যদিও প্রচলিত রয়েছে যে, একবার তিনি খালি হাতে বাঘ শিকার করেছিলেন, কিন্তু এটি সত্য নয়। বাস্তবে, তাঁর অপ্রতিরোধ্য শক্তি এবং সাহসিকতার কারণে, পাঞ্জাববাসী তাকে এই উপাধি দেয়। ১৯৪০ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে তার অসাধারণ ভাষণে তিনি পাকিস্তান প্রস্তাব প্রথম পেশ করেন। তার এই ভাষণ ছিল প্রখর এবং প্রভাবশালী, যা তার নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে যায়।
ফটোগ্রাফিক মেমরি এবং শারীরিক শক্তি:
এ কে ফজলুল হক ছিলেন একাধারে বুদ্ধিমান এবং শারীরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। তার ফটোগ্রাফিক মেমরি ছিল অসাধারণ—একবার যা পড়তেন, শুনতেন বা দেখতেন, তা কখনও ভুলতেন না। ছোটবেলায় তিনি এক বই দুইবার পড়তেন না, আর যা কিছু পড়া হয়ে যেত, তা ছিঁড়ে ফেলতেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘদেহী এবং তার শারীরিক শক্তি ছিল প্রলম্ভকারী। এমনকি, তিনি এক হাতে এক কিলো নারিকেল ভেঙে ফেলতে পারতেন, এবং মুখে পুরে রাখতেন আস্ত আম।
তার এই শারীরিক শক্তির কারণে লোকমুখে প্রচলিত হয়েছিল যে, তিনি একবার খালি হাতে বাঘ শিকার করেছিলেন, কিন্তু এই কাহিনীটি শুধুই কিংবদন্তি। তবুও, তার এই শারীরিক শক্তির কথা সর্বত্র প্রচলিত ছিল, এবং তার শক্তিমত্তা তার রাজনৈতিক জীবনেরও একটি বড় অংশ হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক জীবনে ফজলুল হকের অবদান:
১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌ শহরে, লীগ কংগ্রেসের যুক্ত অধিবেশনে ফজলুল হক যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তা পরবর্তী সময় “লক্ষ্ণৌ চুক্তি” নামে অভিহিত হয়। এটি ভারতীয় রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। ১৯১৮ সালে, তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের দিল্লী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, যেখানে তার ভাষণ ছিল তীব্র এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তার এই বক্তৃতা ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন দিক নির্দেশ করে।
তার বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি মুসলিম লীগের চ্যালেঞ্জ এবং মুসলিমদের অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন, যা তার রাজনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে।
Last words:
এ কে ফজলুল হক, ‘শের-ই-বাংলা’, ছিলেন একজন বিরল ব্যক্তি যিনি তার রাজনৈতিক, বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক শক্তি এবং মেমরির কারণে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তার নাম আজও আমাদের মাঝে প্রতিধ্বনিত হয়, বিশেষ করে বাংলার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে। ‘শের-ই-বাংলা’ উপাধি, যা তিনি পেয়েছিলেন পাঞ্জাববাসীদের থেকে, আজও তাকে সম্মানিত করে, এবং তার অবদান সবসময় মনে রাখা হবে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে।