বেনাপোল প্রতিনিধি:
যশোরের শার্শা উপজেলার গোগা ও বেনাপোলের পুটখালী ইউনিয়নের বারোপোতা বাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬টি করাত কল (স-মিল) বন্ধ করে দিয়েছে। বন বিভাগের অনুমোদনবিহীন ও পরিবেশ আইনের বিরোধী হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পূর্ব নোটিশ ছাড়াই এসব করাত কল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে এবং অসংখ্য ফার্নিচার দোকান ও কাঠ ব্যবসা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
শ্রম হারাল শতাধিক পরিবার, মুখ থুবড়ে পড়েছে ফার্নিচার শিল্প
স্থানীয় ব্যবসায়ী কবির হোসেন, মুরসালিন ও আলমাস হোসেন বলেন, “হঠাৎ করে গোগা বাজারের ৪টি স-মিল বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের ফার্নিচার ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কাঠ কাটাতে এখন অনেক দূরে যেতে হয়, এতে সময় ও খরচ—দুটোই বাড়ছে। পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে গেছে।”
৪০ বছরের ব্যবসার অবসান—এমনই মন্তব্য করেন ইমন স-মিলের মালিক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, “বাপ-দাদার আমল থেকে কাঠের মিল চালিয়ে আসছি। কোনো নোটিশ ছাড়া হঠাৎ এসে মিল বন্ধ করে দেওয়া হলো। এতে করে মিল, দোকান ও কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দুই শতাধিক শ্রমিক এখন কাজ হারিয়ে পথে বসেছে।”
আইনি ভিত্তি তুলে ধরলো প্রশাসন ও বিজিবি
শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শওকত মেহেদী সেতু বলেন, “২০০২ সালের করাত কল আইন এবং ২০১২ সালের সংশোধনী অনুযায়ী, সীমান্তবর্তী ৫ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল স্থাপন নিষিদ্ধ। বিজিবি এই আইন অনুযায়ীই অভিযান পরিচালনা করেছে।”
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার বলেন, “বিষয়টি আমাদের দায়িত্ববদ্ধতার অংশ হিসেবে করা হয়েছে। এটি কারও ব্যক্তিগত উদ্যোগ নয়। আইন মেনেই মিলগুলো বন্ধ করা হয়েছে।”
প্রতিবাদ ও সমন্বয়ের দাবি
স্থানীয়দের মতে, আইনের প্রয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি বিকল্প ব্যবস্থা ও প্রস্তুতির সময় না দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত জনগণের জন্য দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা করাত কলগুলো এই অঞ্চলের জীবন ও জীবিকার অংশ হয়ে উঠেছিল।
ভুক্তভোগীরা দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে করাত কলগুলো পুনরায় চালুর অনুমতি এবং পরিবেশ সম্মত কাঠ ব্যবসা চালু রাখার সুযোগ চেয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও শার্শা উপজেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউনুছ আলী ফোন রিসিভ করেননি।