ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী কসবা-আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভারতীয় মোবাইল সিমকার্ডের ব্যবহার বেড়ে গেছে, যা অনেক ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বৃদ্ধির জন্য একটি বড় কারণ হয়ে উঠছে। সীমান্ত এলাকাগুলোর জনগণ প্রধানত ভারতীয় মোবাইল ফোন কোম্পানির সিমকার্ড ব্যবহার করছেন, যেগুলো তাদের এলাকায় বাংলাদেশি মোবাইল নেটওয়ার্কের অপ্রতুলতা এবং দুর্বল সিগনালের কারণে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
মোবাইল সিমকার্ডের ব্যবহারের প্রভাব:
সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাজারগুলোতে দিনে দিনে মোবাইল ফোন ব্যবহার বেড়ে গেছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। এই মোবাইল ফোনগুলোতে বাংলাদেশের কোনো মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ড না থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সিমকার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতীয় মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহারের ফলে তরুণরা ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন সেবা যেমন গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ফ্রি-ফায়ার, পাবজি ইত্যাদি ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছেন।
চোরাচালান ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড:
ভারতীয় সিমকার্ড ব্যবহার করার ফলে সীমান্তে চোরাচালান, মাদকপাচার এবং মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রবণতা বেড়ে গেছে। ভারতীয় চোরাকারবারীরা বাংলাদেশের চোরাকারবারীদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে এসব অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় অপরাধ প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয়দের মন্তব্য:
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা ভারতীয় মোবাইল সিম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ তাদের এলাকায় বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক সেবা নেই। কসবা উপজেলার পুটিয়া খাদলা বাজারের একজন বাসিন্দা মো. আরমান বলেন, “এলাকার কোথাও বাংলাদেশি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, তাই ভারতীয় সিম ব্যবহার করছি।” তিনি আরও বলেন, “এভাবে সিম ব্যবহার করলে মাঝে মাঝে বিজিবি আমাদের হয়রানি করেন, তবে সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সীমান্ত অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করলে উপকৃত হব।”
বিজিবির প্রতিক্রিয়া:
এ ব্যাপারে বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্তের মানুষ ভারতীয় সিম ব্যবহার না করার জন্য তারা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, “আমরা সংশ্লিষ্ট মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করেছি, যাতে তারা সীমান্ত অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক উন্নত করে।”
এ ধরনের ঘটনা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভারতীয় মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহারের ফলে সীমান্তে অপরাধ বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্বও হারাচ্ছে। সরকার এবং আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা এবং সীমান্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের উন্নতি ঘটানো, যাতে সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা বাংলাদেশি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে সক্ষম হন।