সত্যজিৎ দাস, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
গত কয়েক দিনের টানা ভারি থেকে অতিভারী বর্ষণ এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের হাওর ও নদীপারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হাকালুকি হাওরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যেই পানির নিচে। মনু, ধলাই, ফানাই ও সোনাই নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর আগাম বন্যা সতর্কতা জারি করলেও, জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনু নদীর ভাঙনরোধ প্রকল্পে ধীরগতি জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, অগ্রগতি মাত্র ৫৭%
২০২২ সালে অনুমোদিত ৯৯৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলাকে মনু নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেয় পাউবো। ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি মে পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ৫৭ শতাংশ।
প্রকল্পে মোট ৭২টি কাজের মধ্যে রয়েছে—বাঁধ মেরামত, চর অপসারণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ ও পুনর্বাসন। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, অর্থ সংকট এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের বাধার কারণে অনেক কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে কাজ শুরু হলেও নির্ধারিত সময়সীমায় শেষ না হওয়ায় ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে।
অভিজ্ঞতা ও আশঙ্কা—একই চক্র
স্থানীয়রা বলছেন, গত বছর মনু নদীর ভাঙনে বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও মাছের ঘের ডুবে যায়। হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। সেবার ভাঙন রোধে বালির বস্তা ফেলা হলেও তা ছিল অস্থায়ী সমাধান। এ বছরও যদি প্রকল্প শেষ না হয়, তবে ফের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে জেলার একাধিক উপজেলা।
বিশেষ করে টিলাগাঁও, হাজীপুর, পৃথিমপাশা, গাজীপুর, সাধনপুর, মন্দিরা, কাউকাপন, তেলিবিল, চানপুর, বেলেরতল, ছৈদল বাজার ও রাজাপুর এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শঙ্কা
টিলাগাঁও ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বলেন,
“আশ্রয়গ্রাম, মিয়ারপাড়া ও হাজীপুরের গুদামঘাটের বাঁধগুলো এখনো অরক্ষিত। এ অবস্থায় বন্যা এলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে।”
পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন,
“শিকড়িয়া এলাকায় বড় ধরনের ভাঙন এখনো পূরণ হয়নি। এ কারণে এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।”
পাউবোর অবস্থান
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন,
“কিছু এলাকায় স্থানীয় বাধার কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা সবদিক সামলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো রক্ষায় কাজ করছি।”
চাই দ্রুত, কার্যকর সমাধান
বন্যার পদধ্বনি যখন দোরগোড়ায়, তখন কোটি টাকার প্রকল্পে ধীরগতি স্থানীয়দের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা চাইছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজের গতি বাড়িয়ে স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করুক।