নাজমুল হোসেন, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও):
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে দত্তক নেওয়ার নামে বিক্রি হওয়া এক নবজাতক শিশুকে ৯ দিন পর ফিরে পেয়েছেন তার মা। গর্ভধারণ থেকে সন্তান জন্ম এবং সন্তান হারানোর ঘটনাটি একটি শিশু বিক্রির সিন্ডিকেটের ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেছে, যেটি পীরগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকায় গোপনে সক্রিয়।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তিনি গত বছর জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে যান এবং সেখানে কুমিল্লার এক প্রবাসীকে বিয়ে করে গর্ভবতী হন। চলতি বছরের ১৩ জুন দেশে ফিরে আসেন এবং ২১ জুন পীরগঞ্জের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন। কিন্তু সন্তান জন্মের মাত্র ১০ মিনিট পর আঞ্জু, সাবিনা, সুজন ও মানিক নামে চার ব্যক্তি “দত্তক নেওয়ার” কথা বলে শিশুটিকে নিয়ে যান।
পরবর্তীতে শিশুর কোনো খোঁজ না পেয়ে তিনি স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন ব্যক্তিদের সহায়তা চান। গণমাধ্যমের অনুসন্ধান শুরু হলে দালাল চক্র বিষয়টি আঁচ করতে পেরে স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে শিশুটিকে ফেরত দেয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দালালচক্রটি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে ঢাকায় বসবাসরত বগুড়ার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে।
সমাজকর্মী ও সাংবাদিকদের হুমকি
মানবাধিকার কর্মী নাহিদ পারভিন রিপা বলেন, “চক্রটি মূলত দরিদ্র ও অসহায় নারীদের টার্গেট করে শিশু পাচার করছে। প্রশাসনের নজরদারি এবং জনসচেতনতা না থাকায় এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।”
পীরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, শিশু বিক্রি সিন্ডিকেটের অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার হুমকির শিকার হয়েছেন। পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাহিত্য সম্পাদক লিমন সরকার বলেন, “বাচ্চাটি উদ্ধারের সময় আমরা现场ে উপস্থিত ছিলাম। চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায় এবং পরে আমাদের হুমকি দেয়।”
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জানান, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে শিশু বিক্রি, অবৈধ গর্ভপাতসহ নানা সমাজবিরোধী কাজে জড়িত।
অভিযুক্তদের বক্তব্য
অভিযুক্ত আঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, “আমার হাত অনেক বড়, আপনারা কিছুই করতে পারবেন না।” অপর সদস্য সাবিনা দাবি করেন, “আমি শুধু রক্তের ব্যবস্থা করেছিলাম, দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত মা নিজেই নিয়েছিলেন।” সুজনও একই বক্তব্য দেন।
পুলিশ বলছে…
পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। তবে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হব