মো:সোহেল রানা,ঠাকুরগাঁও:
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুখানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের গোপন কক্ষ থেকে টিসিবির পণ্য উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে ঐ ইউনিয়ন পরিষদের গোপন কক্ষ থেকে ১ বস্তা চিনি, কিছু সয়াবিন তেলের বোতল, মশুর ডাল উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
কিভাবে এ পণ্য গুলো এখানে আসলো এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানা মান্নান। বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
অভিযোগ রয়েছে, ১৩২৬ জন স্মার্টকার্ডধারী উপকারভোগীর জন্য বরাদ্দকৃত টিসিবি পণ্য গত ১২ এপ্রিল বিতরণের কথা থাকলেও সেগুলোর একটি অংশ গোপনে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
স্থানীয়রা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সন্দেহজনক কক্ষটির ওপর নজরদারি শুরু করেন। পরে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সকলের উপস্থিতিতে সেই গোপন কক্ষের তালা খোলা হলে চোখে পড়ে লুকিয়ে রাখা টিসিবির পণ্য গুলো।
ঘটনার সময় উপস্থিত স্থানীয়রা জানান, অধিকাংশ উপকারভোগী তাদের প্রাপ্য পণ্য পাননি। অথচ কাগজপত্রে দেখানো হয়েছে, বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিতরণ সম্পন্ন হলে এই পণ্য গুলো কিভাবে এখানে আসলো এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান, “আমার নামে কার্ড থাকা সত্ত্বেও অফিসে গিয়ে শুনি সব পণ্য শেষ হয়ে গেছে।” আরেকজন বলেন, “আমরা জেনেছি কিছু পণ্য পাচার হয়েছে, আর কিছু এখনো সচিবের পাশের কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঐ ইউনিয়নের গোপন কক্ষটি সচিব ভবেশ চন্দ্র রায়ের কক্ষের ভিতরেই অবস্থিত। কক্ষটি দরজা তালা লাগানো। কক্ষের ভিতরে টিসিবির পণ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন কাগজপত্র আছে।ভিতরে যেতে চাইলে তিনি চাবি নেই দাবি করে বলেন, কক্ষের একটি চাবি গ্রাম পুলিশ নব ও আরেকটি চাবি ডিলার রাজিবের কাছে রয়েছে।
পরে গ্রাম পুলিশ নবকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে গেলেও পরবর্তীতে স্বীকার করে জানান, কক্ষের মধ্যে ৫টি প্যাকেজ সংরক্ষিত রয়েছে সেগুলো প্যানেল চেয়ারম্যান মান্নান সাহেবের ভাই জিলানীসহ বাকী স্টাফদের।
তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান শুখানপুকুরী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানা মান্নান। তিনি বলেন, গত ১২ এপ্রিল কার্ডধারীদের টিসিবির পণ্য বিতরণের পরে অবশিষ্ট পণ্যগুলো পরের দিন বিতরণ করা হয়। তবে পরিষদের কক্ষে টিসিবির পণ্য আছে কিনা এটি আমার অজানা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
স্থানীয়দের অনেকেই টিসিবির পণ্য না পেয়ে পরিষদের গোপন কক্ষে লুকিয়ে রাখার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এলাকাবাসীরা আরো বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদে গোপন কক্ষে টিসিবির পণ্য থাকবে আর চেয়ারম্যান অথবা সচিব সাহেব কিছুই জানেন না এটা কি করে হয়। তাহলে তারা তাদের দায়িত্ব কিভাবে পালন করে এমন প্রশ্ন তুলছেন তারা। বিষয়টিতে প্যানেল চেয়ারম্যান মান্নান সাহেবের হাত রয়েছে এবং সচিব সাহেবের চালাকিতে এসব কর্মকাণ্ড ইতোপূর্বেও হয়েছে এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।