স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা:
পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের চর জোড়পুকুরিয়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে নিজের স্ত্রীকে ব্যবহার করে হামলা ও ভ্রুণ নষ্টের নাটক সাজিয়ে প্রতিপক্ষ ও এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দা সুন্দর আলীর বিরুদ্ধে।
এই ঘটনাটি প্রথম আলোচনায় আসে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও অভিনেতা সাইমুম সাজিদের একটি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে। কিছুদিন আগে তিনি লাইভে দাবি করেন, তাদের বাড়িতে প্রতিপক্ষ হামলা চালিয়েছে এবং তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। লাইভটির পরপরই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত মামলা দায়ের করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ—পুরো বিষয়টি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। জানা যায়, মৃত এজেম উদ্দিনের ছেলে হাজি আব্দুল জলিল তার ভাই হাজি মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে জমি কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দেন। কিন্তু মোসলেম উদ্দিনের ছেলে সুন্দর আলীর প্ররোচনায় জমির রেজিস্ট্রি না হওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এই বিরোধের জেরে, ২৮ জুন সুন্দর আলী ও তার চাচাতো ভাই সাইমুম সাজিদ নিজেদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের নাটক সাজিয়ে আব্দুল জলিলের পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা (নং: ২৫, তারিখ: ২৯ জুন) দায়ের করেন। পরবর্তীতে, ৯ জুলাই আরও একটি মামলা (নং: ০৯) দায়ের করা হয়, যেখানে দাবি করা হয়—২৮ জুন সন্ধ্যায় হামলাকারীরা সুন্দর আলীর স্ত্রী মেরিনা খাতুনের পেটে আঘাত করে, যার ফলে তার দুই মাসের ভ্রুণ নষ্ট হয়।
তবে এই ভ্রুণ নষ্টের অভিযোগ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের স্টাফ নার্স বিথি খাতুন এক অডিও বার্তায় জানান, আল্ট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্টে গর্ভে কোনো ভ্রণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, কেবল “Gestational Sac” দেখা গেছে।
হাসপাতালের আরএমও ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এটি ব্লাইটেড ওভাম নামে একটি স্বাভাবিক জৈবিক অবস্থা, যার জন্য কাউকে দায়ী করা যায় না।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুন্দর আলী বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। জমির বিষয়টি নিয়ে আইনগত প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছি, অথচ প্রতিপক্ষ এখন আমাদের মানহানির চেষ্টা করছে।”
তবে এলাকাবাসীরা বলছেন, সুন্দর আলী অতীতেও তার স্ত্রীকে ব্যবহার করে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করেছিলেন। এমনকি নিজের বাবাকেও মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তার বাবা মোসলেম উদ্দিন নিজেই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এই ঘটনায় পুলিশ সুন্দর আলীসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
চর জোড়পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা দুলাল হোসেন ও নাসিম প্রাং বলেন, “সুন্দর আলী বারবার মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকাবাসীকে হয়রানি করছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।”
সুজানগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবর রহমান বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তে যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের নাম বাদ দেওয়া হবে।”