Shahjahan Ali Manon, Nilphamari District Representative:
প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে একমাস আগে। আর সেই প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত দুপুরের খাবার দেয়া হলো একমাস পর। তাও এসংক্রান্ত খবর প্রকাশ হওয়ার প্রেক্ষিতে। ফলে বিষয়টা নিয়ে বেশ হাস্যরস ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়।
ঘটনার প্রেক্ষিতে জানা যায়, কারখানার শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রতি বছর প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ‘ইন হাউজ ট্রেনিং’ নামের এই প্রশিক্ষণ বাবদ এবার ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য বরাদ্দ হয় ২০ লাখ টাকা। যা দিয়ে অর্থ বছরের প্রথম দিকে ১০ লাখ টাকা ব্যায় করা হয়। বাকী ১০ লাখ টাকা নিয়ে শেষ পর্যায়ে এসে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা প্রশিক্ষণ।
গত জুন মাস জুড়ে কারখানার ২৮ টি সপে পর্যায়ক্রমে দেয়া হয় এই প্রশিক্ষণ। এতে প্রায় সাড়ে ৬শ’ স্থায়ী শ্রমিক অংশ নেয়। নিয়মানুযায়ী প্রশিক্ষণের দিন সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার সহ ৫ শ’ টাকা করে ভাতা দেয়ার কথা। কিন্তু এবার প্রশিক্ষণার্থীদের দুপুরের খাবার দেয়া হয়নি। এবাবদ জনপ্রতি ৫৮০ টাকা করে কেটে মোট সাড়ে তিন লাখ টাকা কর্তৃপক্ষ নিজেদের কাছে রেখে দেয়।
এতে অভিযোগ উঠে এই টাকা তসরুপ করা হয়েছে। শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য দেয়ার দাবী জানান এবং আন্দোলনের হুমকি দেয়। এমনকি একদিন কর্মবিরতিও পালন করে। এরপর ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের চাপে কর্তৃপক্ষ জানায় টাকা রক্ষিত আছে এবং এই টাকা দিয়ে বড় আয়োজন করে কারখানার সবাই মিলে খাওয়া হবে। প্রশিক্ষণ নেয়া শ্রমিকরা তখন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার বলেন, এটা আমাদের প্রাপ্য। তা স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং অফিস স্টাফদের জন্য খরচ করা হবে কেন? এমন করা হলে তা নিয়ম বহির্ভূত হবে।
এর প্রেক্ষিতে কয়েকজন সংবাদ কর্মী শ্রমিকদের মতামতের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের মন্তব্য জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, প্রশিক্ষণের খাবারের টাকা দিয়ে সকলের জন্য বড় আয়োজনে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে এমন নিয়ম না থাকলেও এখন থেকে শুরু করা হবে। এতে সকল শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য তৈরি হবে।
পরে এ নিয়ে নাগরিক টিভি ও দৈনিক জনকণ্ঠসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এর ফলে কারখানা কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারা প্রশিক্ষণ কার্যবিধির বিপরীতে নেয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং গত বৃহস্পতিবার ও আজ শনিবার সপে সপে পৃথকভাবে এক প্যাকেট করে বিরিয়ানি বিতরণ করেছেন প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শ্রমিকদের মাঝে। এতেও প্রশ্ন উঠেছে এক প্যাকেট বিরিয়ানির দাম কি ৫৮০ টাকা? এখানেও দূর্নীতি করা হয়েছে বলে অনেক শ্রমিকের অভিযোগ।
কারখানার কার্য ব্যবস্থাপক (ডাব্লিউ এম) মমতাজুল হক খাবার দেয়ার কথা স্বীকার করে সংবাদ কর্মীদের বলেন, মূলত: কিছু ট্রেড ইউনিয়ন নেতার পরামর্শে প্রশিক্ষণের খাবারের টাকা কেটে রাখা হয়েছিল। এখানে তসরুপ করা বা আত্মসাতের কোন বিষয় ছিলনা। তারপর কেউ কেউ সংবাদ করায় এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাই সকল শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তাদের নিয়ে খাওয়ার আয়োজনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধু যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের একবেলার খাবার দেয়া হলো।
এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) সংবাদ কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন বলে জানা গেছে। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ এভাবে খাবারের টাকা কেটে রেখে আবার ব্যতিক্রমভাবে খাবার বিতরণ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।
বর্তমান ডিএস যোগদানের পর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে বেশ সমালোচনারও সৃষ্টি হয়েছে। যার মধ্যে এই খাবারের ঘটনা ও গত ঈদে সংবাদ কর্মীদের বোনাস প্রদানের ঘটনা নতুন রেওয়াজ হিসেবে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।