মোঃ রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়া:
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন পরিষদের প্রায় সব সদস্য, সংরক্ষিত নারী সদস্যসহ হাজারের বেশি স্থানীয় বাসিন্দা। কর্মসূচি চলাকালে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক তার অনুসারী কয়েকজন যুবকসহ বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত সাতজন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় চিকিৎসক ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা চেয়ারম্যানকে পরিষদ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং চেয়ারম্যানকে পুলিশ হেফাজতে নেয়।
পরে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার একটি মামলায়—২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার ওপর হামলার অভিযোগে—ডিবি পুলিশ ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার দেখায় এবং আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করেন, পরিষদের কোনো সিদ্ধান্তে সদস্যদের মতামত নেওয়া হয় না। চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, পরিষদের আয় ব্যক্তিগত হিসাবে জমা রাখা এবং পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করার অভিযোগও তোলেন তারা।
সংরক্ষিত নারী সদস্য জরিনা বেগম বলেন, ১৩ মাস ধরে আমরা সম্মানিভাতা পাই না। বরং দাবি জানালে গালাগাল ও হুমকি দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়, যা পরিষদের হিসাবে জমা না দিয়ে চেয়ারম্যান নিজে নিয়ন্ত্রণ করেন।
তারা আরও বলেন, চেয়ারম্যান ওমর ফারুক মাদকাসক্ত। তিনি মাদকসেবীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন, বয়স সংশোধনের নামে ঘুষ নেন এবং নারী উন্নয়ন ভাতায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে।
ইউপি সদস্য রকিব উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, শাহাবুদ্দিন মুরাদ ও সাইফুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছরে চেয়ারম্যান আনুমানিক ৬০ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। পরিষদের কোনো সিদ্ধান্তই রেজুলেশনের মাধ্যমে হয় না—সবকিছু চলে একনায়কতন্ত্রে।
ব্রাহ্মণপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান জুয়েল বলেন, চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে আমরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি এবং তাকে নিরাপদে থানায় সরিয়ে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও দুটি মামলা রয়েছে। কোতোয়ালি থানার মামলায় তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাঁকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।