মনির হোসেন, বেনাপোল:
নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগআঁচড়া সাতমাইল বাজার থেকে বেলতলা আমবাজার পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা এখন পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ মৃত্যু ফাঁদে। খানাখন্দে ভরা, কর্দমাক্ত ও জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত এ সড়কে প্রতিদিন জনজীবন হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত।
বাগআঁচড়া সাতমাইল বাজারে দেখা গেছে, বড় বড় গর্তে জমে থাকা পানিতে পথচারী ও যানবাহন চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার চেহারা পাল্টে যায়, মনে হয় শহরের বুকে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা পুকুর!
স্থানীয় ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান বলেন, “গর্তে পানি জমে গাড়িগুলো একে অপরকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়মিত যানজট তৈরি হয়। হঠাৎ বৃষ্টিতে বাজারে পানি ঢুকে পড়ে, রীতিমতো ডুবে যায় মানুষ।”
বাগআঁচড়া কলেজের শিক্ষার্থী তিশা খাতুন বলেন, “আগে কলেজে পৌঁছাতে ২০ মিনিট লাগতো, এখন লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। পরীক্ষা থাকলে সময়মতো পৌঁছানো যেন দুঃস্বপ্ন।”
ভ্যানচালক আয়ুব আলী মুন্সি জানান, “প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী বহন করি। গর্তে পড়ে প্রায়ই ভ্যান উল্টে যায়। সড়ক বিভাগের কেউ খোঁজ নেয় না।”
স্থানীয় যুবক জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করে বলেন, “নিম্নমানের উপকরণ আর লোক দেখানো সংস্কারই এই দুরবস্থার কারণ। প্রতি বছর একই অবস্থা হয়—সাংবাদিকরা আসে, ছবি তোলে, রিপোর্ট হয়, আর সড়ক বিভাগ দুই বস্তা বালি দিয়ে চলে যায়। কয়েকদিন পর সব আবার আগের মতো।”
দায় এড়াচ্ছে কর্তৃপক্ষ?
যশোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খান জানান, “মহাসড়ক সংস্কারের দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে, ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জুলাই মাসে কাজ শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি সড়কে ড্রেন নির্মাণ সম্ভব নয়। আবার বিটুমিনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো পানি—যা বর্ষায় সহজেই ক্ষয়ে যায়। তাই শুধু মেরামত নয়, জনসচেতনতাও জরুরি।”
তবে প্রশ্ন রয়ে যায় —
যেখানে সড়ক প্রতিনিয়ত প্রাণহানির শঙ্কা সৃষ্টি করছে, সেখানে সংস্কার প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা কেন? আর কেনই বা দীর্ঘমেয়াদি ড্রেনেজ পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে না?
সাতমাইল থেকে বেলতলা পর্যন্ত সড়কটি যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার লাখো মানুষের চলাচলের প্রধান মাধ্যম। দ্রুত ও টেকসই সংস্কার না হলে এটি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে—এমন আশঙ্কাই করছেন ভুক্তভোগীরা।